পিয়নের চাকরি না দেওয়ায় মাদ্রাসা সুপারকে খুন
পিয়নের চাকরি না দেওয়ায় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নুরনগর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা সুপার মাওলানা বাবুল আক্তারকে গলা কেটে হত্যা করেছেন ওই মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবুল কালাম।
এই হত্যাকাণ্ডের একদিন পর আজ শুক্রবার পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কালাম এ কথা জানিয়েছেন। সকালে তাঁকে নুরনগর স্কুলের বাথরুম থেকে আটক করে এলাকাবাসী পুলিশে সোপর্দ করে। জবানবন্দির পর তাঁকে সাতক্ষীরায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শ্যামনগর থানার সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক আবুল আসাদ জানান, ‘নুরনগর গ্রামের আবুল কালাম (৩০) ভাবলেশহীনভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার পরনে ছিল লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি। তবে হত্যার নেপথ্যে অন্যকিছু লুকিয়ে আছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’ কালাম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জবানবন্দিতে আবুল কালাম পুলিশকে জানান, ‘আমাকে দিবাভাগের পিয়ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। অথচ আমাকে দিয়েছেন নৈশপ্রহরীর পদ। আমি আপত্তি করায় আমাকে শনিবার থেকে মাদ্রাসায় আসতে মানা করেছিলেন তিনি।’
কেন তাঁকে হত্যা করলে?-পুলিশের এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতকর্মী আবুল কালাম আরো জানান, ‘আমি সুপারের কাছে চাকরির পদ পরিবর্তনের জন্য বারবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু আমার কথায় কান দেননি তিনি। এমপিওতে আমার নাম রয়েছে নৈশপ্রহরী পদে। আমি তা মেনে নিতে পারিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপারের সঙ্গে এই নিয়ে বাকবিতণ্ডার পর সিদ্ধান্ত নেই যে মাদ্রাসায় হয় সুপার থাকবেন, আর না হয় আমি থাকব। এই জিদ ধরে খুঁজতে থাকি ধারালো অস্ত্র, পেয়েও যাই। যখন দেখলাম সবাই মাদ্রাসা থেকে চলে গেছেন, তখন মনে করলাম এটাই বড় সুযোগ। মেইন রোডে বসে থাকলাম। সুপার সাইকেলে করে আসতেই তার ঘাড়ে পেছন থেকে কোপ বসিয়ে দেই। তিনি আমাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করলে আমি আরো একটি কোপ বসিয়ে পালিয়ে যাই।’
এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আমজাদ হোসেন জানান, গতকাল দুপুরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে কালাম প্রথমে নুরনগর স্কুলে লুকিয়ে থাকে। আজ সকালে সে স্কুলের বাথরুমে থেকে তার ভাইয়ের অপেক্ষায় ছিল। খবর পেয়ে গ্রামবাসী তাকে ধরে ফেলে। পরে পিটুনি দিয়ে তাকে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি সোহেল বাবুর বাড়িতে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। তবে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
গতকাল দুপুরে মাওলানা বাবুল আকতার (৪৭) ক্লাস শেষ করে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। গত পাঁচ বছর ধরে এই মাদ্রাসায় সুপার পদে চাকরি করছিলেন। মাদ্রাসার কাছে ভুরুলিয়া ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামে তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন।