বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ছাত্রীকে পিটিয়ে জখম
বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শরীয়তপুর পৌরসভার আঙ্গারিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীকে পিটিয়ে জখম করেছে বখাটেরা। গতকাল বুধবারে রাতের এই ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন আহত ছাত্রীকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ছাত্রীর মা।
আহত ওই শিক্ষার্থীর পরিবার ও পালং থানা সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর পৌরসভার আঙ্গারিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রী আঙ্গারিয়া হাজতখোলা গ্রামে নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে। গত বছর পয়লা বৈশাখে আঙ্গারিয়া বাজারে বৈশাখী মেলায় শরীয়তপুর জেলা শহরের সার্কিট হাউজ সংলগ্ন এলাকার মতি বেপারীর ছেলে লিটন বেপারীর পরিচয় হয় ওই ছাত্রীর। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিন মাস আগে ওই ছাত্রীর পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয় লিটন। এরই মধ্যে ছাত্রী জানতে পারে লিটন আরেকটি বিয়ে করেছে এবং তার একটি সন্তান রয়েছে। পরে মেয়েটি লিটনের বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এর পর থেকে লিটন ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েটিকে বিভিন্ন সময় স্কুলে যাতায়াতের পথে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এদিকে লিটন মেয়েটির নানার বাড়ির এলাকার হারুন সরদারের ছেলে সোহেল ও আঙ্গারিয়া লতা স্টুডিওর সাগরের সহযোগিতা নেয়। লিটনের সঙ্গে মেয়েটির যৌথ তোলা ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে শুরু করে। এই সুযোগে মেয়েটির নানা বাড়ি এলাকার সোহেলও তাকে বিভিন্ন ধরনের কুপ্রস্তাব দেয় বলে অভিযোগ করে স্কুলছাত্রী।
স্কুলছাত্রী জানায়, লিটন ও সোহেল দুজনে মিলে আঙ্গারিয়া বাজারের সাগরের স্টুডিও থেকে আপত্তিকর কিছু ছবি বানিয়ে তার আত্মীয়স্বজন ও এলাকার লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। গত মঙ্গলবার রাতে সোহেল, লিটন ও সাগরসহ অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজন তাদের বাড়ি গিয়ে ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসে। এরপর স্কুলছাত্রী ও তার পরিবার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে বিষয়টি তাঁরা থানায় জানাতে বলে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় স্কুলছাত্রী তার নানিকে নিয়ে বাড়ি থেকে থানায় যাওয়ার সময় লিটনের নির্দেশে তার বন্ধু সোহেল থানায় যেতে বাধা দেয়।
এ নিয়ে সোহেলের সঙ্গে ওই ছাত্রীর কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সোহেল ওই ছাত্রীর বাড়িতেই তাঁকে কাঠ দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে ওই ছাত্রী মাথা ফেটে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার ছাত্রীর মা বাদী হয়ে লিটন, সোহেল ও সাগরকে আসামি করে পালং মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
নির্যাতিত স্কুলছাত্রী বলে, ‘আমাকে বিয়ে করার কথা বলে এক বছর ধরে নানা ভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল স্থানীয় বখাটে লিটন বেপারি। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে মারপিট করে।’
ছাত্রীর মা বলেন, ‘লিটনের অত্যাচারে তিন মাস ধরে মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। থানায় অভিযোগ করতে গেলে মাঝ পথ থেকে জোর করে ধরে এনে আমার মেয়েকে মারধর করে লিটন ও তার সহযোগীরা।’
এদিকে লিটন আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে মেয়েটির গভীর প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।’ আগামী মাসে আমাদের দুজনের বিয়ে হওয়ার কথা। চলতি মাসের ১০ তারিখে ওকে নিয়ে আমি সিলেট মাজারে গিয়ে সেখানে হোটেলে ছিলাম। বাড়িতে এসে শুনি গোসাইরহাট এলাকার একটি ছেলেকে ও বিয়ে করেছে।’
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, মেয়েটির মা বাদী হয়ে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। মামলা রুজু করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।