ঝিনাইদহে কারখানায় আগুন, বিদেশিসহ দগ্ধ ৪
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার অচিন্তানগর এলাকায় তাজি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক চীনা নাগরিকসহ চারজন দগ্ধ হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ছয় ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুনে দগ্ধ চারজন হলেন কারখানার কেমিস্ট চীনা নাগরিক ফ্রাঙ্ক, কারখানাটির মালিকের ভাগ্নে কো-অর্ডিনেটর জুবায়ের রহমান এবং শ্রমিক জালাল ও মনিজান। তাঁদের মধ্যে ফ্রাঙ্কসহ তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। অপরজন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহবুব আলম তালুকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুলকার নায়েনসহ প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা ইউএনও জুলকার নায়ন বলেন, আগুনে চারজন গুরুতর দগ্ধ হন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইদহ সদর হাসপতালে ভর্তি করে। এরপর মুমূর্ষু অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয় ।
ইউএনও আরো বলেন, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কারখানাটিতে পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই তৈরি করা হতো । সেই ছাই বস্তা ভর্তি করে পাঠানো হতো চীনে। এ বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের জানা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি ।
ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য
যশোর ফায়ার সার্ভিসেরৱ সহকারী পরিচালক পরিমল চন্দ্র কুন্ডু ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে বলেন, ছাই তৈরির এ কারখান দুই বছর ধরে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। কারখানাটির বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই।
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, কারখানায় ডজনখানেক চুল্লি রয়েছে। অথচ অগ্নি নির্বাপনের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। গরম ছাই লোহার কন্টেইনারে সংরক্ষণ করার কারণে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
কারখানার প্রকৌশলী যা বললেন
কারখানার তড়িৎ প্রকৌশলী খালিদ হোসেন জানান, চীন-বাংলাদেশ যৌথভাবে কারখানাটি পরিচালনা করে আসছিল । পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই তৈরি করে চীনে পাঠানো হতো। তিনি আরো জানান, এ কারখানার প্রধান মালিক নোয়াখালীর নাজমুল ইসলাম। এখানে চারজন চীনা নাগরিক থাকতেন। তাঁরা হলো অগ্নিদগ্ধ ফ্রাঙ্ক ও তাঁর স্ত্রী মারিয়া, ম্যাক এবং দোভাষী জেলিন।
খালিদ হোসেন জানান, ২০১৩ সালে ছয় বিঘা জমির ওপর কারখানাটি গড়ে তোলা হয়। ২০১৪ সালে উৎপাদন শুরু হয়। পাট কাঠি পুড়িয়ে ছাই প্রক্রিয়াজাত করে বস্তা ভর্তি করে পাঠানো হতো চীনে । এ ছাই থেকে চীনে মোবাইলের ব্যাটারি, কম্পিউটারের কালি, এবং মেয়েদের ব্যবহার্য কসমেটিকস প্রস্তুত করা হয়। কারখানাটির বৈধ অনুমোদনের বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তিনি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বক্তব্য
স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাজেদুর ও পাটকাঠি সরবরাহকারী আব্দুল মান্নান বলেন, কারখানাটিতে ২২০ টাকা মণ দরে পাট কাঠি কিনে তা বিশেষ পদ্ধতিতে পুড়িয়ে ছাই করা হতো । কারখানার বৈধতার ব্যাপারে তারা সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য
সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ছাই তৈরির সময় এলাকায় এক ধরনের প্রকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা আরো জানান, কারখানার ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। নির্ধারিত ২৯ জন পাটকাঠির ঠিকাদার এ ব্যবসার বিষয়টি জানতেন । কারখানাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় ঝিনাইদহ পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, অগ্নিদগ্ধসহ চারজন চীনা নাগরিক পাসপোর্টধারী । জেলা পুলিশ প্রশাসন তাঁদের অবস্থানের বিষয়ে আগে থেকেই জানতেন। তবে চীনা নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট আছে কি না, তা জানাতে পারেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।