বৃদ্ধের জমি দখলে তিন এসআইয়ের সঙ্গে সাব রেজিস্ট্রারও!
ময়মনসিংহের ভালুকায় আবজস আলী (৮০) নামের এক বৃদ্ধের জমি দখলে পুলিশের তিন উপপরিদর্শককে (এসআই) উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সারোয়ার হোসেন সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার ও পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, জমি ক্রয়-বিক্রয় ও দলিল সম্পাদনের বিধান লঙ্ঘন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি হতে পারে।
জমি দখলের অভিযোগ থাকা তিন এসআই হলেন ফায়েজুর রহমান, রুহুল আমীন ও ফারুক হোসেন। তিনজনই ভালুকা থানায় কর্মরত। ওই তিনজনসহ স্থানীয় আরো চারজন আবজস আলীর জমি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আবজস আলী ভালুকার পাড়াগাঁওয়ের বাসিন্দা। জমি দখলের বিষয়ে তাঁর আইনজীবী নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে গতকাল দুপুরে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের।
বাবু এনটিভি অনলাইনকে জানান, আমমোক্তারনামা দলিল সম্পাদনের সময় গ্রহীতা ও দাতাদের প্রত্যেকের উপস্থিতি আইনে নিশ্চিত করা আছে। গ্রহীতারা পুলিশ অফিসার হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়েছেন। এ ছাড়া দাতা আবজস আলীর জাতীয় পরিচয়পত্রে (৬১১১৩৬১৭৯৪৬৭০) থাকা জন্মতারিখও জাল করেছেন গ্রহীতারা।
আবজস আলীর আইনজীবী জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে আবজস আলীর জন্মতারিখ ২৩ জানুয়ারি, ১৯৩৫ লেখা আছে। অথচ দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৩ জানুয়ারি, ১৯৫৫। অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই তাঁর বয়স প্রায় ৩০ বছর কমিয়ে আনা হয়েছে।
আইনজীবী আরো জানান, এ ধরনের কাজে স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা বর্তমান কর্মস্থলের ঠিকানা গোপন করেছেন। তিনি বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি তিন পুলিশসহ সাতজনকেই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলেও তাঁরা এখনো জবাব দেননি। সব মিলিয়ে বিবেচনা করলেই বোঝা যায়, পুলিশের এই তিন এসআই প্রতারণামূলকভাবে আবজস আলীকে স্ব-জ্ঞানে ব্ল্যাকমেইল করেছেন।
দলিল ও লিগ্যাল নোটিশ সূত্রে জানা যায়, ভালুকা শিল্পাঞ্চলের পাড়াগাঁও মৌজার সাবেক ৯৫, বিআরএস ১৫০৫, ১৫১৯ নম্বর দাগে এক একর ৫৪ শতাংশ আবজস আলীর পৈতৃক জমি রয়েছে। সেই জমি ৯ ফেব্রুয়ারি ১৩৬০ নম্বর আমমোক্তারনামা দলিল রেজিস্ট্রি হয়। ভালুকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এই দলিলের গ্রহীতা হলেন ভালুকা মডেল থানার তিন এসআই।
সহকারী কমিশনার যা বললেন
এ বিষয়ে ভালুকার সাব-রেজিস্ট্রার সারোয়ার হোসেনকে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। আর ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল আহসান তালুকদারকে কল করা হলে সেটি রিসিভ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাখাওয়াত হোসেন। ইউএনও ছুটিতে আছেন জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ইউএনও মহোদয় বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তবে কাগজপত্র না দেখে কিছু বলতে পারব না। আপনি কাগজপত্র নিয়ে ভালুকায় আসেন।’
জেলা রেজিস্ট্রারের বক্তব্য
এ বিষয়ে ছুটিতে থাকা ময়মনসিংহের জেলা রেজিস্ট্রার মো. বি এ মোছাদ্দেক হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে আমমোক্তারদাতা আবজস আলীর বয়স-ঠিকানা না মিলিয়ে এবং গ্রহীতাদের সঠিক পরিচয় জেনেও তা আমলে না নিয়ে দলিল সম্পাদন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অন্যায় করেছেন। এ বিষয়ে ধারাবাহিক তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
বি এ মোছাদ্দেক আরো বলেন, তিনি কর্মস্থলে এসে অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখবেন।
পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য
পুলিশের তিন এসআইর পরিচয় গোপন ও জমির মালিকানা অর্জনের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে পূর্বানুমতি নিতে হয়। তা না নেওয়া আইনের লঙ্ঘন। পরিচয় গোপন করাও অপরাধ।