বোরো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন ভৈরবের কৃষকরা
ধানের উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায় অব্যাহত লোকসানের মুখে পড়ছে ভৈরবের কৃষকরা। এ কারণে বোরো চাষে তাদের আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে বোরোর আবাদ। কমছে ধানের মোট উৎপাদন। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধানের বাজারদর সরকারিভাবে নির্ধারণ না করলে ধীরে ধীরে বোরো আবাদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছে কৃষকরা। স্থানীয় কৃষি বিভাগও ধানের মূল্য উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করার আহ্বান জানিয়েছে।
মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত হাওরাঞ্চলের প্রবেশমুখ ভৈরব বোরো আবাদের জন্য সব সময়ই অনকূল ছিল। ফলে অন্যান্য ধানের তুলনায় এখানে বোরোর আবাদই হতো বেশি। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই আবাদ কমে যাচ্ছে। কৃষি উপকরণ, শ্রমিক মজুরিসহ সেচ খরচের অব্যাহত বৃদ্ধির বিপরীতে কয়েক বছর ধরে ধানের বাজারদরের নিম্নমুখিতার কারণে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে লোকসান। ফলে ঋণে কৃষকদের নাভিশ্বাস উঠছে বলে দাবি তাদের। আর সেই জন্যই বোরো আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে তারা। তাদের দাবি, এক মণ বোরো ধান উৎপাদনে জমিতে তাদের খরচ পড়ছে সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু সেই ধান বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এতে প্রতি মৌসুমে তাদের মোটা অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। এই সংকট নিরসনে তারা অবিলম্বে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে।
অপরদিকে বিদ্যুৎ, ডিজেলসহ সেচযন্ত্র ও যন্ত্রাংশের মূল্য চড়া হওয়ায় সেচ প্রকল্প চালু রাখা কষ্টকর হয়ে ওঠছে বলে জানান সেচ প্রকল্পের মালিকরা। তাদের দাবি, সেচ প্রকল্পের সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধির বিপরীতে লোকসানি কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা যাচ্ছে না। ফলে সেচপ্রকল্প চালিয়ে লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তারা বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ, ডিজেলসহ সেচপ্রকল্পের অন্যান্য উপকরণের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে।
এদিকে, কয়েক বছর ধরে বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না বলে জানায় ভৈরব কৃষি বিভাগ। তাদের দেওয়া বিগত তিন আবাদ বছরের তথ্যমতে প্রতি বছরই কমছে বোরো আবাদ। ২০১৩-১৪ বছরে বোরো আবাদের ছয় হাজার ১০৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয় পাঁচ হাজার ৯৩৫ হেক্টর। ২০১৪-১৫ বছরে ছয় হাজার ২২৫ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত হয় ছয় হাজার ১০০ হেক্টর। আর চলতি ২০১৫-১৬ মৌসুমে ছয় হাজার ৮২ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও এই প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত অর্জন হয়েছে চার হাজার তিন হেক্টর জমি।
ভৈরবে অব্যাহতভাবে বোরো ধানের আবাদ কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জালাল উদ্দিন প্রধানও কৃষকদের লোকসান থেকে রক্ষায় ধানের বাজারদর বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।