কিশোরগঞ্জে ভারমুক্ত হলো আ. লীগ
দীর্ঘ ১৯ বছর পর ভারমুক্ত হলো কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহানকে নতুন সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজালকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আর কোনো পদে কোনো নাম ঘোষণা না করা হলেও আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
জেলা শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে আজ বিকেলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘ ১৯ বছর সম্মেলন না হওয়ায় তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, নিয়মিত সম্মেলন দলকে আবার উজ্জীবিত করে। যারা অতীতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতি করেছে, যদি নিয়মিত সম্মেলন না হয় তারা কী করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসবে এবং ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। এভাবে ১৯ বছর পরপর সম্মেলন হলে অনেককেই দলীয় পদ ছাড়াই কবরে যেতে হবে। তাই নিয়মিতভাবে যথাসময়ে জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন সব পর্যায়ের সম্মেলন করতে হবে।
সৈয়দ আশরাফ আরো বলেন, ‘আমরা সততার মাধ্যমে কিশোরগঞ্জসহ সারা দেশের ভাগ্য উন্নয়ন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ দেশের মানুষ ভালো নেই দাবি করে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যারা পেট্রল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে পাকিস্তানি আদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে আজ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেই তিনি কষ্ট পাচ্ছেন। তিনি হচ্ছেন আগুন সন্ত্রাসের রানি।
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, প্রচার কমিটির সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে তুমুল মাতামাতি ছিল লক্ষণীয়। এ পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর কর্মী-সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে জোর প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। ফেসবুকে প্রচার, ব্যানার-ফেস্টুন ও গণসংযোগ সব ধরনের প্রচারে এ দুজন ছিলেন এগিয়ে।
সম্মেলন শুরুর আগেই আজ দুপুরে এই দুই নেতার সমর্থকরা স্টেডিয়ামের ভেতর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আধ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ১০-১২ জন কর্মী আহত হন এবং বেশ কিছু চেয়ার ভাঙচুর হয়। তাদের কয়েকজনকে জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়।
তবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কাউকেই সাধারণ সম্পাদক না করায় দুই নেতার সমর্থকরা মুষড়ে পড়েন এবং তাদের মধ্যে নীরবতা নেমে আসে।
সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে গঠিত কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম পট্টু মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি গত বছরের ১ ডিসেম্বর ৭৮ বছর বয়সে মারা যান। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান আরেক সহসভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহান।
অপরদিকে ১৯৯৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক গোলাপ মিয়ার মৃত্যু হলে হলে কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন ঠাকুরকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর শাহাবুদ্দিন ঠাকুরও মারা যান। পরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজালকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০০৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিন্নাতুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করার পর থেকে পদটি সাত বছর ধরে শূন্য থাকে।
এর মধ্যে আরো মারা যান জেলা কমিটির সহসভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ও ফয়সল আলম। সদস্যদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন শ্যামল ঘোষ, আনোয়ার হোসেন, সোহরাব উদ্দিন ও হুমায়ুন কবির। বহিষ্কার হয়েছেন প্রচার সম্পাদক আনোয়ার কামাল ও সদস্য আবুল হাসেম। সব মিলিয়ে জেলা কমিটির হাতেগোনা আট থেকে ১০ জন নেতা কোনো রকমে দলটি চালিয়ে নিচ্ছিলেন।