শুরু হলো রোহিঙ্গা নিবন্ধন
কক্সবাজার জেলায় মাঠ পর্যায়ে রোহিঙ্গা নিবন্ধন কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের আরো পাঁচ জেলায় এ কার্যক্রম চলবে। জেলাগুলো হলো—বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও উপকূলীয় পটুয়াখালী।
কক্সবাজার জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান জানান, আজ শুক্রবার থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খসড়া নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। আগামী মার্চের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত শনাক্তকরণ কাজ আবারও শুরু হবে।
দেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের (মিয়ানমারের নাগরিক) সংখ্যা নির্ণয়ে সরকার প্রথমবারের মতো শুমারি করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান এ পরিসংখ্যান কর্মকর্তা।
জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবির ও টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে প্রায় ৩৩ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা, যারা এ দেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে।
কক্সবাজার জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি-২০১৬’ শীর্ষক প্রকল্পটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ছবি ও সাধারণ তথ্যসংবলিত একটি তথ্যসম্ভার প্রণয়ন করা। তাদের বর্তমান অবস্থান এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আগে মিয়ানমারে মূল বাসস্থানের ঠিকানা তৈরি করা। এ ছাড়া অনুপ্রবেশের অন্তর্নিহিতকরণ চিহ্নিত করা এবং রোহিঙ্গাদের আর্থসামাজিক ও জনমিতি-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তৈরি করা।
পরিসংখ্যান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, খানা তালিকার কাজ করতে কক্সবাজার জেলাকে ৪৯টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। ১১০ জন সুপারভাইজার ও এক হাজার ৯০ জন গণনাকারী তালিকা করবেন। আজ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খানা তালিকার কাজও চলবে।
রোহিঙ্গা শুমারির জন্য ‘বি’, ‘এম’ ও ‘এক্স’—এই তিন ক্যাটাগরিতে খানার তালিকা করা হবে। ‘বি’ ক্যাটাগরি হচ্ছে, যে খানার প্রত্যেক সদস্যই বাংলাদেশি। ‘এম’ ক্যাটাগরি হচ্ছে, যে খানার প্রত্যেক সদস্যই বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক। ‘এক্স’ ক্যাটাগরি হচ্ছে, যে খানায় বাংলাদেশি ও অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক বসবাস করছেন। অর্থাৎ যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বিয়ে করেছেন, তাঁরা ‘এক্স’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। ‘এক্স’ ক্যাটাগরির অনিবন্ধিত নাগরিকদের বের করাটা কিছুটা কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি-২০১৬’ প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সঠিক কোনো হিসাব না থাকলেও মিয়ানমারের তিন থেকে পাঁচ লাখ নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তে কড়াকড়ি সত্ত্বেও প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এসব রোহিঙ্গা দেশের বনভূমি ধ্বংস করে বাসস্থান গড়ে তুলে পরিবেশের ক্ষতি করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া স্থানীয় শ্রমবাজার ও উপকূলীয় সমুদ্রবেষ্টনী প্রকল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এসব রোহিঙ্গা।