হঠাৎ বিস্ফোরণ, পুড়ে অঙ্গার ৬ জন
গাজীপুরে টায়ার পুড়িয়ে তেল সংগ্রহের একটি কারখানায় বয়লারের হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হয়ে পথচারী এক স্কুলশিক্ষিকাসহ ছয়জন নিহত এবং দুজন দগ্ধ হয়েছেন। আজ শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় দগ্ধ দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হচ্ছেন স্থানীয় বারইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সিদ্দিকা জেবুন্নেসা (৪০), বসুগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও কারখানার নিরাপত্তারক্ষী মো. সেলিম মোল্লা (৪৫), মাদারীপুর জেলার বাঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা কাওসার হোসেন (৪০) ও অটোরিকশাচালক স্বাধীন।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পুবাইলের কলেজ গেট এলাকায় স্মার্ট মেটাল অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানায় শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কারখানায় কমপক্ষে ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কাজ করতেন। এ কারখানায় গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার পুড়িয়ে তেল (সড়কের কাজে বিটুমিনের সঙ্গে ব্যবহারের জন্য) সংগ্রহ করা হয়।
আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, বিকেল ৪টার দিকে বিকট শব্দে কারখানার দুটি বয়লার পরপর বিস্ফোরিত হয়। প্রায় একই সঙ্গে তেল ভর্তি করে ওই কারখানায় রাখা একটি ট্যাংকলরিতে আগুন ধরে সেটিও বিস্ফোরিত হয়। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে বয়লারগুলো টুকরো টুকরো হয়ে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় চার-পাঁচশো ফুট দূরে ছিটকে পড়ে। এ সময় স্টিলের কাঠামোর ওই কারখানা ভবনটিও ধসে পড়ে এবং ছিন্নভিন্ন হয়ে দূরে ছিটকে পড়ে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ও বাতাসের গতিবেগের কারণে আগুন ওই কারখানা ভবনের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আগুনে সড়কের পাশের গাছসহ অপর একটি ট্যাংকলরি পুড়ে যায়।
এ সময় কারখানার পার্শ্ববর্তী জয়দেবপুর-পুবাইল সড়ক দিয়ে স্কুল শেষে বাসায় যাওয়ার সময় অটোরিকশা আরোহী স্কুলশিক্ষিকা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং রিক্শাচালক স্বাধীন আহত হন। বিস্ফোরণের পরই স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানার অগ্নিদগ্ধ সুপারভাইজার আবদুল কাদের (৫৫) ও কামাল হোসেনকে (৪৯) গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং রিকশাচালক স্বাধীনকে টঙ্গী হাসপাতালে পাঠান। খবর পেয়ে জয়দেবপুর, টঙ্গী ও কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় জয়দেবপুর-পুবাইল সড়কের ওপর থেকে তিনটি এবং কারখানা এলাকা থেকে দুটি পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করেন। লাশগুলো আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়ায় সেগুলোর পরিচয় উদ্ধারে কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে রাত হয়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সার্চলাইটের সাহায্যে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, অগ্নিদগ্ধদের শরীরের শতকরা ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে টঙ্গী হাসপাতালে আনার পর রিকশাচালক স্বাধীন মারা যান বলে জানিয়েছেন টঙ্গী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পারভেজ হোসেন।
তদন্ত কমিটি গঠন
হতাহতের খবর পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম অগ্নিদগ্ধদের দেখতে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। তিনি ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, নিহতদের দাফনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।