শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্যামসন এইচ চৌধুরীকে স্মরণ

পাবনায় নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে দেশবরেণ্য শিল্পপতি, স্কয়ার গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টায় পাবনা শহরের বৈকণ্ঠপুর অ্যাস্ট্রাস খামারবাড়িতে বিশেষ প্রার্থনা ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে স্যামসন এইচ চৌধুরী পরলোকগমন করেন। তাঁকে পাবনা শহরের কাশীপুরের বাসভবন অ্যাস্ট্রাসে সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ফেলোশিপের উপদেষ্টা ডেভিড প্রণব দাসের পরিচালনায় স্মরণসভায় স্যামসন এইচ চৌধুরীর জীবনের ওপর স্মৃতিচারণা ও পবিত্র বাইবেল থেকে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ফেলোশিপের উপদেষ্টা ডেনিস দিলীপ দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক লিয়র পি সরকার।
পরিবারের পক্ষ থেকে স্মৃতিচারণা করেন প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর মেজো ছেলে স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক তপন চৌধুরী। পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের যাজক ডেভিড রতন দাসের প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শেষ হয় স্মরণসভা।
এ সময় প্রয়াত চেয়ারম্যানের বড় ছেলে স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল এস চৌধুরী, স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, স্কয়ার টয়লেট্রিজ ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বেবী ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, সম্পাদক আহমেদ উল হক রানা, সাবেক সভাপতি শিবজিত নাগ, প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক জোড়বাংলা সম্পাদক আবদুল মতীন খান, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক এ বি এম ফজলুর রহমান, মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান উৎপল মির্জা, জেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম রিজু, সাংবাদিক কলিট তালুকদার, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হোসেন বাদশা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও ধ্রুব কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, মাসকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোর্তুতা সনি বিশ্বাস, পাবনা অ্যাথলেটিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম চৌবে ডাবলু, বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী খসরু ও আবদুল হান্নান, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহীদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর ছোট ভাই সত্যেন চৌধুরী ও সমর চৌধুরী, বোন মিরা সরকারসহ পরিবারের সব সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কাশিয়ানী থানাধীন আড়ুয়াকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন ইয়াকুব হোসেন চৌধুরী। স্যামসন চৌধুরী ভারতে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৫২ সালে পাবনার আতাইকুলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একটি ফার্মেসির চিকিৎসা কর্মকর্তা।
ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি স্যামসন এইচ চৌধুরীর আগ্রহ ছিল। প্রথমে নিজে বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করেন ‘ই-সনস’ নামক ওষুধ তৈরির কারখানা। পরে বাবার কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে ১৯৫৮ সালে চার বন্ধু মিলে পাবনা শহরে শালগাড়িয়া এলাকায় গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস নামে প্রথম ওষুধ কারখানা। স্কয়ার আজ বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ। বর্তমানে স্কয়ার ফার্মায় ২৮ হাজারসহ স্কয়ার গ্রুপের ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
১৯৮৮ সাল থেকে ওষুধের পাশাপাশি নতুন শিল্প স্থাপন শুরু করে স্কয়ার। ওই সময়ে স্কয়ার ফার্মার একটি আলাদা বিভাগ হিসেবে স্থাপন করা হয় স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড। এরপর একে একে স্থাপিত হতে থাকে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৫ সালে স্কয়ার টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ শুরু করে। স্কয়ারের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ টেক্সটাইল খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভোগ্যপণ্য।
স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯৯৮ সালে আমেরিকান চেম্বার কর্তৃক বিজনেস এক্সিকিউটিভ অব দ্য ইয়ার, ২০০০- ২০০১ সালে ডেইলি স্টার ও ডিএইচএল কর্তৃক বেস্ট এন্টারপ্রেনার অব দ্য কান্ট্রি, ২০০৩ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০০৫ সালে ব্যাংকার্স ফোরাম অ্যাওয়ার্ড ও ২০০৬ সালে আইএসএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে পরপর দুই বছর দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সেরা করদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পান। ২০০৯ ও ২০১০ সালে সিআইপি মনোনীত হন।
বর্তমানে স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্কয়ার স্পিনিংস, স্কয়ার টয়লেট্রিজ, স্কয়ার কনজিউমার প্রোডাক্টস, স্কয়ার ইনফরমেটিকস, স্কয়ার সারাহ নিড ফেব্রিকস, স্কয়ার হসপিটালস, স্কয়ার অ্যাগ্রো, স্কয়ার হারবাল অ্যান্ড নিউট্রিসিটিক্যাল, এজিএস সার্ভিসেস, মাছরাঙা প্রডাকশন, প্যাকেজেস, বর্ণালী প্রিন্টার্স লিমিটেড ও মিডিয়া কম ও মাছরাঙা টেলিভিশন। এ ছাড়া আবাসন প্রতিষ্ঠান শেলটেক, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে স্কয়ার গ্রুপের শেয়ার রয়েছে।