ভৈরবে মাছ চাষে লাভবান চাষি
ভৈরবে মাছ চাষ করে লাভবান মৎস্যজীবী ও খামারিরা। জলাশয়ে ছড়ানো ঘেরজালে নানা প্রজাতির ও বিভিন্ন আকৃতির মাছের নাচন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিভিন্ন এলাকার জলাভূমির প্রতিদিনের দৃশ্য।
এই মাছ চাষ কেবল ভৈরবের মৎস্যজীবী ও খামারিদের লাভবানই করে তুলছে না, বরং একদিকে তাঁরা ভূমিকা রাখছেন এলাকার মাছের চাহিদার ঘাটতি পূরণে, অন্যদিকে জাতীয় পুষ্টি এবং দেশের অর্থনীতিতে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এমনটাই অভিমত স্থানীয় মৎস্য বিভাগের।
ভৈরবে বর্ষায় পানি জমে এমন ডুবো-নালা, প্লাবনভূমি ও পুকুর-বিলে মাছের চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। আর ওই সব মাছের প্রজেক্টে কর্মসংস্থান হচ্ছে এলাকার অনেক বেকার মৎস্যজীবীর। দেশের মাছ ও আমিষের ঘাটতি পূরণে এসব মাছের খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে জানায় স্থানীয় মৎস্য বিভাগ।
মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় অবস্থিত হাওরাঞ্চলের প্রবেশমুখ ভৈরব ডুবো-নালা ও নিচু ভূমিতে ভরপুর। এসব জলাভূমিতে প্রজেক্ট আকারে কোথাও দলবদ্ধ, কোথাও এককভাবে মাছের চাষ করেন এলাকার মৎস্যজীবীরা। সেসব খামারে মাছ চাষ করে মুনাফা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ পদ্ধতিতে করা মাছ চাষ।
মাছের প্রজেক্টের খামারিরা জানান, তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, সরপুঁটি, গ্রাস কার্প, রুই-কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি মাছের চাষ করেন তাঁরা। এক বিঘার প্রতিটি খামারে ৫০ হাজার টাকার মাছ চাষে আয় হয় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। এতে করে শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য খরচ শেষে নিট লাভ হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।
অন্যদিকে এসব খামারে আকারভেদে সাত-আটজন করে বেকার মৎস্যজীবীর কর্মসংস্থান হয়। এ ছাড়া খামারের আশপাশের লোকজন প্রতিদিন টাটকা মাছ সস্তায় কিনে খেতে পারেন। এতে করে নিজেদের মুনাফার সঙ্গে সঙ্গে এলাকাবাসীর আমিষ পূরণেও চাষি-মালিকরা ভূমিকা রাখছেন বলে জানান উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের ছাগাইয়া গ্রামের খামারি আবু লায়েছ মিয়া ও শিমুলকান্দি ইউনিয়নের তুলাকান্দি গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন।
এলাকার মৎস্যজীবী হারেছ মিয়া, সুবির দাস, অমিয় দাস, কুদ্দুছ মিয়া ও নরেন্দ্র দাস জানান, এসব মাছের খামার হওয়ায় তাঁরাও বেশ উপকৃত হচ্ছেন। খামারে কাজ করে মজুরির পাশাপাশি বিনে পয়সায় মাছও পাচ্ছেন। এতে তাঁদের পরিবারের মাছের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে।
অন্যদিকে এলাকার খলিল মিয়া, আবু হোসেন, সুমি বেগম ও জিতেন চন্দ্র জানান, এসব মাছের খামার হওয়ায় প্রতিদিন তাঁরা সস্তায় তাজা মাছ কিনে খেতে পারছেন।
ভৈরব উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার এনটিভি অনলাইনকে জানান, এসব খামারি এলাকায় মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও বেকার মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশ অবদান রেখে চলেছেন। আর তাঁদের নানাভাবে পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ।