প্রতীক ছাড়িয়ে ব্যক্তিই হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ
পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে সরগরম ছিল কিশোরগঞ্জ পৌরসভা। ছিল উৎসাহ ও উদ্দীপনা। কিন্তু ছিল না সহিংসতা, ভীতি, কারচুপির অভিযোগ কিংবা নির্বাচন বর্জন বা প্রত্যাখ্যানের মতো বিষয়।
এমনকি নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী পারভেজ মিয়া (মাহমুদ পারভেজ নামে বেশি পরিচিত) মিষ্টি ও ফুল নিয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মাজহারুল ইসলামের বাড়িতে হাজির হন। এ সময় তিনি পৌরসভার উন্নয়নে মাজহারুল ইসলামের সহযোগিতা কামনা করেন। অন্যদিকে মাজহারুল ইসলামও পারভেজকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
দেশের অন্যান্য পৌরসভার চেয়ে এক ব্যতিক্রম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জ পৌরসভায়। নির্বাচনের পর গতানুগতিকভাবে কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেনি কোনো পক্ষ। দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ চলাকালেও ছিল না কেন্দ্র দখল ও এজেন্ট বের করা নিয়ে কোনো প্রার্থীর অভিযোগ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব কাটিয়েছে নিরুদ্বেগ সময়। এর আগে পুরো নির্বাচনী প্রচারকালেও দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ, ছিল না কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি। বরং দল, মত ও পথ মিলিয়ে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের চমৎকার বিরল মেলবন্ধন ছিল নজরে পড়ার মতো।
এমন একটি অনন্য ব্যতিক্রমী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কিশোরগঞ্জ পৌরসভার ভোটাররা প্রধান কারণ মনে করছেন মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে পারভেজ মিয়াকে মনোনয়ন প্রদান। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মিয়া গত পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও হাল ছেড়ে দিয়ে থেমে থাকেননি। এরপর থেকে কয়েক বছর ধরেই তিনি তৃণমূলে কাজ করে যান। অমায়িক ও সজ্জন স্বভাবের কারণে তিনি খুব দ্রুতই সব শ্রেণির নাগরিকদের হৃদয়ে স্থান করে নেন। সফল রাজনীতিকের পাশাপাশি সাবেক খেলোয়াড় ও বর্তমানে ক্রীড়া সংগঠক ছাড়াও একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতার কারণে সবার মন জয়ের ক্ষেত্র আগে থেকেই প্রস্তুত করেছিলেন তিনি।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে বিএনপি সমর্থকদের অনেকেই পারভেজকে মনোনয়ন দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। কৌশলগত কারণে আড়ালে থাকলেও নির্বাচনের দিন পারভেজকে ভোট দেন অনেক বিএনপি সমর্থক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিএনপি নেতা জানান, তাঁরা নৌকা প্রতীকে নয়, পৌরসভার উন্নয়নের স্বার্থে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে পারভেজকে ভোট দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থীর প্রতি রাগ-বিরাগের বিষয় ছিল না।
নিজ দলের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের পাশাপাশি বিএনপির একটি বড় অংশের সমর্থনের কারণে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে আধিপত্য ধরে থাকেন মাহমুদ পারভেজ। সেই সঙ্গে তারুণ্যনির্ভর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী বক্তৃতায় কিশোরগঞ্জকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন আকৃষ্ট করে ভোটারদের। যার ফলে মাহমুদ পারভেজের সহজ বিজয় নিশ্চিত হয়। পাঁচ হাজার ১১৮ ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার মো. আসাদ উল্লাহ বলেন, দলীয় প্রতীকের পরও দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে কোনো প্রার্থীর প্রতি এমন ভালোবাসা অভাবিত বিষয়। এ ধরনের নজির খুব কম। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর প্রতি ভালোবাসার পাশাপাশি পৌরসভার উন্নয়নও ভোটারদের ধারণায় ছিল।
নির্বাচনী প্রচারে মাহমুদ পারভেজের প্রধান স্লোগান ছিল ডিজিটাল কিশোরগঞ্জ গড়ে তোলা। ভিন্ন রাজনৈতিক পথ ও মতের মানুষকে যেভাবে এক করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন মাহমুদ পারভেজ, এ অবস্থায় পৌর এলাকার উন্নয়নেও চমক দেখাবেন, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে তুলে সত্যিকার ডিজিটাল কিশোরগঞ্জ-এ প্রত্যাশা এখন কিশোরগঞ্জ পৌরবাসীর।