রাঙামাটির ভোটে রঙের বাহার
আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটি। তবে এখানে পৌরসভা দুটি। এর একটি দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়ি, আর অন্যটি রাঙামাটি। মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়ায় নির্বাচন হচ্ছেন বাঘাইছড়িতে। ফলে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে রাঙামাটি পৌরসভার দিকেই নজর পুরো জেলাবাসীর।
৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাঙামাটি পৌরসভায় ভোটার ৫৭ হাজার ৭৯৪ জন। এদের মধ্যে ৩২ হাজার ১০৮ জন পুরুষ আর ২৫ হাজার ৬৮৬ জন নারী ভোটার। এই ভোটাররা পৌর এলাকার ২৮টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে রাঙামাটির এবারের নির্বাচনে বেশ কিছু মজার সমীকরণ চোখে পড়ছে।
মেয়র-সাবেক মেয়র-প্যানেল মেয়র
রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন বর্তমান মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভুট্টো। তাঁর সঙ্গে লড়ছেন ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে দুবারের জন্য নির্বাচিত মেয়র হাবিবুর রহমান এবং দুবারের কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র রবিউল আলম রবি। বর্তমান মেয়র-সাবেক মেয়র ও প্যানেল মেয়রের ত্রিমুখী দ্বৈরথ বেশ জমবে বলেই মনে হচ্ছে।
পৌর নির্বাচনে জনসংহতি সমিতি
নির্বাচনে ধানের শীষ আর নৌকা প্রতীককে বেশ শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে পাহাড়ের প্রভাবশালী আঞ্চলিক সংগঠন সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন দলটির অন্যতম নেতা ডা. গঙ্গামানিক চাকমা। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে না পারায় দলটি সরাসরি প্রার্থী দিতে পারে না। তবে সর্বশেষ উপজেলা ও সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিচয়ে দাঁড়িয়েও দলটি বেশ ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাঙামাটি পৌরসভায় প্রথমবারের মতো নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে দলটি। ছয় বাঙালি মেয়র পদপ্রার্থীর বিপক্ষে একমাত্র পাহাড়ি প্রার্থী হিসেবে বেশ শক্তভাবেই ভোটের মাঠে থাকবেন তিনি।
প্রভাবশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
জনসংহতি সমিতির স্বতন্ত্র পরিচয়ের প্রার্থী ছাড়াও ভোটের মাঠে আছেন দুবারের সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান, দুবারের কাউন্সিলর ও একবারের প্যানেল মেয়র রবিউল আলম রবি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি অমর কুমার দে। তাঁরা তিনজনই নিজ নিজ জায়গায় বেশ শক্ত প্রার্থী। বিজয়ী হওয়ার দৌড়ে তাঁরা কাউকেই ছাড় দিতে রাজি নন এবং শেষাবধি লড়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন। এঁদের তিনজনের কাছে পা কাঁটতে পারে ‘নৌকার মাঝি’ কিংবা ধানের শীষের ‘কৃষকের’।
হোমিও চিকিৎসক দুই মেয়র প্রার্থী!
মেয়র পদে কোনো অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক না থাকলেও আছেন দুই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। এঁদের একজন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ডা. শিবপ্রসাদ মিশ্র। আর অন্যজন জনসংহতি সমিতি সমর্থিত প্রার্থী ডা. গঙ্গামানিক চাকমা। শিবপ্রসাদের চেম্বার তবলছড়িতে আর ডা. গঙ্গার চেম্বার বনরূপায়। প্রায় নিয়মিতই রোগী দেখেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে শহরের ভোটারদের বেশ হাস্যরস করতেও দেখা গেছে।
কাউন্সিলর থেকে মেয়র!
গত পাঁচ বছর কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার মেয়র পদে লড়ছেন দুজন। এঁরা হলেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গত দুবারের টানা নির্বাচিত কাউন্সিলর রবিউল আলম রবি ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিবপ্রসাদ মিশ্র। এঁদের মধ্যে রবি প্রথমে বিএনপির মনোনয়ন চাইলেও পরে আনুষ্ঠানিকভাবে আর দলের মনোনয়ন চাননি। বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। আর শিবপ্রসাদ আওয়ামী লীগ ছেড়ে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন ভোটযুদ্ধে।
পুরুষরা সবাই আছেন, নারীরা নেই!
রাঙামাটি পৌরসভায় গত পাঁচ বছর ধরে কাউন্সিলর ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সব পুরুষ সদস্যই এবারের পৌরসভা নির্বাচনে মাঠে আছেন লড়াইয়ে। কিন্তু নেই তিন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের একজনও। নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডের নয়জন কাউন্সিলরই আছেন ভোটের মাঠে। দুজন মেয়র পদে লড়ছেন আর সাতজনই লড়ছেন পুরোনো কাউন্সিলর পদে এবং বেশ ভালোভাবেই লড়াইয়ে আছেন তাঁরা। এঁদের অনেকেরই আবার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। এটাকে বেশ ব্যতিক্রমী ও নজিরবিহীন বলছেন সবাই। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো সাধারণ ওয়ার্ডে সবাই নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটযুদ্ধে নামেননি তিন নারী কাউন্সিলর। এদের একজন জেবুন্নেসা রহিম অবশ্য জেলা পরিষদের সদস্য হয়ে কাউন্সিলরশিপ ছেড়েছিলেন। বাকি দুজন রোকসানা বেগম ও জয়তুন নূর বেগম এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণেই তাঁরা ভোটে নামেননি বলে জানিয়েছেন।
প্রার্থীদের বিচিত্র সব পেশা
মেয়র থেকে কাউন্সিলর, লড়ছেন অনেকেই। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সার্বক্ষণিকের রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, দোকানি, ব্যবসায়ী, ঠিকাদারসহ বিচিত্র সব পেশার মানুষ। পুরো পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের মধ্যে একাধিক পেশার ব্যক্তিরা থাকলেও একমাত্র সাংবাদিক প্রার্থী চ্যানেল আইয়ের রাঙামাটি প্রতিনিধি মনসুর আহম্মেদ মান্না। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ছেন তিনি কাউন্সিলর পদে। চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক তরুণ জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী।