‘টাকা জমা দিতে গেলে সারা দিন সোনালী ব্যাংকে ধরনা দিতে হয়’
ময়মনসিংহ সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় কাগজের নোট, কয়েন জমাদানকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে সরকারি বনাম বেসরকারি ব্যাংকারদের অসন্তোষ। বেসরকারি ব্যাংকারদের অভিযোগ, সোনালী ব্যাংকের ক্যাশ সেকশনে কর্তব্যরতরা কাজে অসহযোগী। সংকট উত্তরণে এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলায় পরিস্থিতির উন্নতির বদলে আরো অবনতি ঘটেছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আনোয়ারুল ইসলাম তালুকদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ আমাদের নলেজে আছে। সোনালী ব্যাংক অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহকের টাকা জমা নিতে বাধ্য। টাকা জমা না নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্টভাবে কারো বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বেসরকারি ব্যাংকার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এসএভিপি মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, সোনালী ব্যাংকের ক্যাশ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার ফলে কাগজের নোট ও কয়েন জমাদানে তাঁদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার পর্যায়ে দেনদরবার করার পর সাময়িক উন্নতি হলেও হয়রানি আরো বেড়ে গেছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয় ।
মো. ফরিদ উদ্দিন এর সমাধান দাবি করে বলেন, ‘টাকা জমা দিতে গেলে মিনিমাম দুজন অফিসার পদমর্যাদার ব্যক্তিকে সারা দিন অফিশিয়াল কাজ ফেলে সোনালী ব্যাংকে ধরনা দিতে হয়। এর পরও বিকেল ৪টার পর আর জমা না নিয়ে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে, দিন দিন হয়রানি বাড়ছে। অন্যদিকে কয়েন ও ছোট নোট জমা না নিতে পারায় গ্রাহক পর্যায়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সেবার মান নিম্নগামী ও সম্পর্ক বিনষ্ট হচ্ছে, বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থবাজারে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকাররা অভিযোগ করেন, ১০০০ ও ৫০০ টাকা মূল্যমানের কাগজের নোট ছাড়া বাকি নোট জমা নিচ্ছে না সোনালী ব্যাংক। মাঝেমধ্যে নামমাত্র ছোট নোট জমা নিচ্ছে। এ ছাড়া এক টাকা থেকে ১০০ টাকার কাগজের নোট এবং সব ধরনের ধাতব মুদ্রা জমা নিচ্ছে না সোনালী ব্যাংক। ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ভল্টে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। দেনদরবারের আগে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টাকা জমা নিলেও এখন বিকেল ৪টার পর আর টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে না। শেষতক দেখা যায়, ৪টার পর টাকা ফেরত নিয়ে যেতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে। ব্যাংকাররা জানান, সোনালী ব্যাংক সপ্তাহে মাত্র দুদিন চার্জবিহীন রেমিট্যান্স জমা নিচ্ছে। অন্যদিনের জন্য এক লাখ টাকায় ভ্যাটসহ ১১৫ টাকা চার্জ দিতে হয়। ব্যাংকারদের প্রশ্ন, আন্তব্যাংক রেমিট্যান্স জমাদানের জন্য তাদের সার্ভিস চার্জ দিতে হবে কেন? তারা সার্ভিস চার্জ মওকুফ চান।
ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক শংকর সাহা বলেন, ‘শুধু সোনালী ব্যাংক নয়, কোনো ব্যাংকই ছোট নোট ও ধাতব মুদ্রা নিচ্ছে না। ফলে ঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জমছে টাকা ও কয়েন। এতে ব্যবসায়ীদের অর্থ নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে।’ অবিলম্বে এই সংকট সমাধানের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোর্শেদ আলম খন্দকারকে অফিস নম্বরে (০৯১৬১৪২২) বারবার ফোন করা হলেও তাঁর পিএ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘স্যার ব্যস্ত আছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আনোয়ারুল ইসলাম তালুকদার আরো বলেন, ‘জমি কেনা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু না হলে এ সমস্যা থাকবেই। সমস্যা সমাধানে ভল্ট তৈরি করা দরকার। এ ছাড়া বাজারে ধাতব মুদ্রা না থাকাই ভালো।’