দুবলার চরে সোমবার থেকে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব
সুন্দরবনের দুবলার চরে আগামী ২৩ নভেম্বর, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব।
বন বিভাগ ও উৎসব আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, শত বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের কূলে সুন্দরবনের দুবলার চরে আলোরকোল এলাকায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকের ভরা পূর্ণিমার তিথিতে এ রাস উৎসব উদযাপিত হয়।
পূর্ণিমার জোয়ারের নোনাজলে স্নান করে পাপমোচন হবে—এমন বিশ্বাস নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রাস উৎসবে যোগ দিলেও কালের বিবর্তনে এখন তা নানা ধর্ম-বর্ণের লোকদের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
দুবলার চরের এ মেলায় লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকাযোগে তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা এসে সমবেত হন দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। একই সঙ্গে আসেন অসংখ্য বিদেশি পর্যটকও। উৎসবের সময় কুটির শিল্পের বিভিন্ন মালের পসরা সাজিয়ে বসে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এ ছাড়া নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
মংলার বেসরকারি একাধিক পর্যটন কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, রাস উৎসবে যোগ দিতে এরই মধ্যে অনেক পর্যটক লঞ্চ ও স্পিডবোট বুকিং নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন জানান, আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে এবার বেশ জমজমাটভাবে মেলা উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মংলাসহ সুন্দরবনের আটটি পয়েন্ট দিয়ে রাসমেলায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব পয়েন্ট দিয়ে অসংখ্য নৌকা ও ট্রলারে করে হাজার হাজার দর্শনার্থী আলোরকোলের উদ্দেশে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করবেন।
জিয়া উদ্দিন আরো বলেন, মেলায় প্রবেশকারীদের নির্দিষ্ট ফি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকবে পুরো মেলার এলাকা।
এদিকে, রাস উৎসব সামনে রেখে দর্শনার্থীর ছদ্মবেশে চোরাশিকারির দল হরিণ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে হরিণ শিকার রোধ ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবনজুড়ে বন বিভাগ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে জারি করা হবে অঘোষিত রেড অ্যালার্ট। হরিণ শিকাররোধে এরই মধ্যে বনের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে বন বিভাগের ১২টি দল। এ ছাড়া বনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বন বিভাগ বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন জানান, রাসমেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও এর নিরাপত্তায় বন বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারও দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকাররোধে বনরক্ষীদের পাশাপাশি মেলায় র্যাব, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল থাকছে। এ ছাড়া মেলায় চোরাশিকারিদের রুখতে দর্শনার্থীদের আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুণ্যস্নানের সময় কোনো পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম জানান, রাসমেলায় কোনোভাবেই যেন হরিণ শিকার ও বনজ সম্পদের ক্ষতি না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এ বছর দর্শনার্থীদের জ্বালানি কাঠ সুন্দরবন থেকে সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হবে না। তীর্থযাত্রীরা কোনোরকম বনজ সম্পদ যাতে বিনষ্ট না করেন, সে জন্য নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।