চট্টগ্রামে শিশু হত্যার দায়ে চারজনের ফাঁসি
চট্টগ্রামে শিশু ইয়াসিন আরাফাত আবীরকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে চারজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে পৃথক দুটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে বিভাগীয় দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক মহিতুল হক এনাম চৌধুরী এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন মো. আনোয়ার, মো. ফারুক, সুজন মিয়া ও ইদ্রিস। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে সুজন মিয়া পলাতক। বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে রাবেয়া বেগমকে। আসামিরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর হালিশহর থানার বি ব্লক আবাসিক এলাকার রিয়াজ উদ্দিনের শিশু ছেলে ইয়াসিন আরাফাত খেলার সময় অপহৃত হয়।
পরের দিন ১৮ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ডের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ইয়াসিনের বাবা রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।
এ ঘটনার এক মাস পর অজ্ঞাত স্থান থেকে অপহরণকারীরা আবীরের মামি রিনা আক্তারকে মুঠোফোনে তাঁর ছেলেকেও অপহরণের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করে। এর সূত্র ধরেই পুলিশ হালিশহরের বিভিন্ন স্থান থেকে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
২০১৪ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।
আদালতের এই রায়ে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘সুজন কীভাবে পালিয়ে গেল। এ ছাড়া রাবেয়াকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এই রাবেয়াই আমার ছেলের মা সেজে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তাঁর স্বামী সিএনজিচালক। সেই সিএনজিতেই কোলে শুইয়ে ওকে নিয়ে গেছে। সে কীভাবে দায়মুক্তি পায়? আমি আইনের আওতায় এনে তাঁর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ এ সময় তিনি ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিও জানান।
চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আইয়ুব খান বলেন, ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর রাষ্ট্রপক্ষের আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এই আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৭ ধারার অপহরণ ও ৭ ধারার মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ওই দুই ধারায় তাঁদের একই সঙ্গে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
পিপি আরো বলেন, আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সময় আদালত ঘোষণা করেছেন, এই চারজন আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের মৃত্যু না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখতে হবে।