নির্বাচন নিয়ে মেননের বক্তব্য, সিদ্ধান্ত নেবে ১৪ দল
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘জনগণ ভোট দিতে পারেনি’ বলে ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতা রাশেদ খানের মেননের বক্তব্যের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন জোটটির নেতারা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গোলটেবিল বৈঠকের পর এ কথা জানান ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক উপলক্ষে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
তবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেই বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি মোহাম্মদ নাসিম।
গত শনিবার বরিশালে দলীয় এক অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষী দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তী সময়ে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা হিসেবে ঢাকা-৮ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন মেনন। বিগত সরকারে প্রথমে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে গত নির্বাচন নিয়ে মেননের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘১৪ দল কোনো ব্যক্তির নয়, এটা জোটবদ্ধ সংগঠন। তবে তাঁর (মেনন) বক্তব্যের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিম যখন এই কথা বলেন তখন তাঁর পাশে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। বৈঠকে রাশেদ খান মেনন আসেননি।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘তাঁর পার্টির সেক্রেটারি এসেছেন। তিনি (রাশেদ খান মেনন) কেন আসেননি, তা আমি বলতে পারব না।’
নাসিম বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের স্বর্ণ অধ্যায় চলছে এখন। একটি মহল এখনো এ বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখছে। যারা এ বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখছে, তারা কোনোকিছুই সোজা চোখে দেখে না।’
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন গুজব আর অপপ্রচার চলছে। এসব গুজব ও অপ্রপ্রচারের জবাব দিতে হবে তথ্য দিয়ে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহবুবের মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, একটি মহল স্বাধীনতার পর জাতির স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে, দেশের স্বার্থ বিলিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে বলে জিকির তুলে আসছে। কিন্তু তারা বারবার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু কোনো চুক্তিই বাতিল করেনি।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, তারা পাকিস্তানের চশমা দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে দেখছে। পাকিস্তানের চশমা দিয়ে দেখলে দেশ লাভবান হয়েছে, অর্থনৈতিক সুবিধা বেড়েছে- এসব চোখে পড়বে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এ দেশে আশ্রয় দিয়ে, অস্ত্রের ট্রেনিং দিয়ে, তাদের জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্র এনে ভারতের কাছে মাফ চেয়েছে। তারা যেকোনো সমস্যাকে আরো বড় সমস্যা তৈরি করে।
আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেবেন না। তিনি জান থাকতে মান দেবেন না।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে এখনো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আগে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এখন তাদের গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিরোধী মহলের কাছে ভারত বিরোধিতা তুরুপের তাস। তারাই ক্ষমতায় থাকলে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। সুতরাং তাদের এসব বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, ‘চুক্তির ক্ষেত্রে আমরা দেখব দেশ কতটুকু লাভবান হয়েছে। সংবিধানের প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে কি না সেটাও দেখতে হবে। চুক্তি কিন্তু সরকারের একার বিষয় নয়, রাষ্ট্রের বিষয়।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে যেসব সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে তা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে শান্তির সম্পর্ক থাকার কারণে উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি ভারতের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পেতেই পারেন। বিএনপি বলছে, বঙ্গোপসাগারে রাডার স্থাপনের মাধ্যমে ভারত চীনের ওপর নজরদারি করবে। কিন্তু এ রাডারের মালিকানা বাংলাদেশের। যা দিয়ে আমরা সমুদ্রসীমার ওপরে কঠোর নজরদারি রাখতে পারব।
বৈঠকে আরো আলোচনা করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, তরিকত ফেডারেশানের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ আরাফাত, সুভাষ সিংহ রায়, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার প্রমুখ।