হাইকোর্টে নিয়োগের মাধ্যমে দুই বিচারপতি পুরস্কৃত : ব্যারিস্টার খোকন
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দুজন নবনিযুক্ত অতিরিক্ত বিচারপতিকে নিয়োগের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়েছে। কেননা লোভ দেখিয়ে তাদের একজন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অপরজন তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছিলেন। এ কারণে তাদের পুরস্কার দেওয়া হয়। আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সরকার নয়জন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য আজকে বিচারপতিদের তালিকায় দুজন বিচারপতির নাম দেখা যাচ্ছে, তাদের নাম তালিকায় দেখে আমরা হতাশ, জাতি হতাশ। আমরা বিচার বিভাগ শক্তিশালী করার জন্য দাবি জানিয়েছি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাহেবও বলেছিলেন, বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখলাম, সরকার জনগণ ও আইনজীবীদের দাবি উপেক্ষা করে নয়জন বিচারপতি নিয়োগ করেছে। তাদের মধ্যে দুজন বিচারপতির নাম দেখে আমরা হতাশ, আইনজীবীরা হতাশ। আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করছি। কেননা বিচারকদের শপথে বলা আছে; কী করা যাবে আর কী করা যাবে না। কিন্তু দুজন বিচারপতি সম্পূর্ণ লোভের বশবর্তী হয়ে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছেন। অপর বিচারপতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেওয়ার জন্য একটি মামলা নতুন করে তদন্ত করে তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পরে তাঁকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে যারা সাজা দিয়েছেন তাদের প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে পুরস্কৃত করার জন্যই বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। বিচারপতিদের পুরস্কার দেওয়ার জন্যই নিয়োগ করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট কাউকে হিংসাত্মকভাবে বিচার দেওয়ার জন্য হতে পারে না। এটি বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্থান। এখানেই যদি বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে লোভ ও পুরস্কারের মাধ্যম হয়; তাহলে মানুষ ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য কোথায় যাবে?
ব্যারিস্টার খোকন বলেন, দেশে কি আর কোনো বিচারপতি হওয়ার মতো লোক নেই। অনেক মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্ন বিচারক ও আইনজীবী থাকা সত্ত্বেও এই দুজনকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ দুজন বিচারকের একজন এলপিআরে চলে গেছেন। এরপরও তাদের এনে পুরস্কার দেওয়া হলো।
এর কিছুক্ষণ পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন সভাপতির কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এটি তিনি (মাহবুব উদ্দিন) রাজনীতিবিদ হিসেবে বলেছেন। অবশ্যই এটা আইনজীবী হিসেবে বলেননি।
আমিন উদ্দিন বলেন, বিচার কার্যপরিচালনা করলে যদি মনে করেন উনারা সংক্ষুব্ধ, সেক্ষেত্রে উনারা তো আপিলই করেছেন। কেন বিচারকদের বিরুদ্ধে বলবেন? এখন কেউ মামলায় হেরে গেছেন, প্রত্যেকে বলবেন এ বিচার ঠিক হয়নি।
গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগে নয়জন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। পরে ওই দিনই এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে শপথগ্রহণের দিন থেকে অনধিক দুই বছরের জন্য নয়জনকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়োগ শপথগ্রহণের দিন থেকে কার্যকর হবে। আজ সোমবার সকালে ওই নয় অতিরিক্ত বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন হাইকোর্টে বিভাগের রেজিস্ট্রার গোলাম রাব্বানী।
যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন—জেলা ও দায়রা জজ (পিআরএল ভোগরত) মুহাম্মদ মাহবুবুল ইসলাম, জেলা ও দায়রা জজ (পিআরএল ভোগরত) শাহেদ নূর উদ্দীন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন, জেলা ও দায়রা জজ ড. মো. আক্তারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার মিন্টু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী ইবাদত হোসেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম জহিরুল হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক।