‘আবরার রক্ত দিয়ে আন্দোলনের বীজ বপন করে গেছে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আবরার রক্ত দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনের বীজ বপন করে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আবরার স্ট্যাটাস দিয়েছিল। এটা দেশের মানুষের প্রতিবাদ। মেধাবী ছাত্র বলেই সেটা করেছে। তার জন্য তাকে প্রাণ দিতে হলো।’
আজ শনিবার বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা এবং ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ড. মোশাররফ বলেন, ‘আবরারের কথা এ দেশের মানুষের কথা। আবরারকে হত্যা করে দেশের জনগণের কণ্ঠকে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র সমাজ এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তার রক্ত জনগণ বৃথা যেতে দেবে না।’ তিনি বলেন, ‘শহীদ জেহাদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার পতনের বীজ বপিত হয়েছিল। তেমনি আবরারের রক্তের বিনিময়ে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বীজ রোপিত হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, গণতন্ত্র মুক্ত হবে।’
ভারতের সঙ্গে চুক্তির সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ নেতা বলেন, ‘ফেনী নদীর পানি উত্তোলনে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন, সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে সম্মতি দিয়েছেন, উপকূলে যৌথ নজরদারির নামে ভারতকে ২০টি রাডার প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা যে এলপিজি আমদানি করি তা ভারতে রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছেন। এই চুক্তির প্রতিটি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘ফেনী নদীর পানি উত্তোলনের অনুমতি দিলেন কিন্তু তা কতখানি তারা উত্তোলন করবে তা পরিমাপ করার বিষয়ে এই চুক্তিতে কিছু নেই। এছাড়া ৩৬টি পাইপ দিয়ে এরইমধ্যে ফেনী নদীর পানি ভারত জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘এর ফলে ফেনী নদীর পাশের লোকজনের কৃষি কাজ ব্যাহত হবে। মুহুরী প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনি বলছেন জাতীয় স্বার্থ ব্যাহত করেননি। সাবরুম শহরে তাহলে এতদিন তারা পানি পান করেছিল না? এটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে প্রতারণা করে ভারতকে সুবিধা দেয়ার জন্যই করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সমুদ্রবন্দরে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভারতের পণ্য বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে খালাস হলে আমাদের ব্যবসায়ীরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যৌথ পর্যবেক্ষণের নামে বিদেশি রাডার স্থাপন হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হবে, হুমকির মুখে পড়বে। আর এলপিজি আমদানি করে করে তা রপ্তানি করবেন। চারটি চুক্তি ভারতের স্বার্থে করা হয়েছে। এটা দেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি।’
খন্দকার মোশাররফ আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করেছিলেন গ্যাস না দেয়ার জন্য ২০০১ সালে তিনি ক্ষমতায় আসতে পারেননি। তাহলে এবার কি তার খেসারত দিলেন। আসলে শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে তিনি চুক্তি করে এসেছেন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ বক্তব্য দেন।