সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের ঘটনায় ওবায়দুল কাদেরের দুঃখ প্রকাশ
রাজধানীর আজিমপুরের বটতলা এলাকায় গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে লালবাগ থানা পুলিশের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, গতকাল রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক। তাঁর (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক কাজী মোবারক হোসেন) বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। এরপর আবার এ ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনা শুনে আমার খারাপ লেগেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি এ বিষয়টি জানেন। আমি এ বিষয়টি তাদের সঙ্গে মনিটর করব।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত কর্মশালায় আজ রোববার ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। তিনি ফিরে আসুক। আমি পুলিশের আইজির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব, যাতে সম্মানজনক সুরাহা হয়।’
বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর আজিমপুর বটতলা এলাকায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক কাজী মোবারক হোসেনের ভাইকে মারধর ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে পুলিশ। এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ফখরুল ইসলাম শাহীন এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে এবং ছবি তোলার চেষ্টা করলে লালবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আসলাম মোল্লা তাঁকে চড় মারেন।
সাংবাদিকের ভাইকে মারধর ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার ঘটনায় লালবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কালাম ও চার কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু আসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক কাজী মোবারক হোসেন বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কনভেনশন হলে তাঁর বিবাহোত্তর সংবর্ধনা ছিল। অনুষ্ঠান শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিতে দিতে মধ্যরাত হয়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে নরসিংদীর গ্রামের বাড়ি থেকে আসা তাঁর বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও ভাতিজা রিয়াদ (২১) অটোরিকশায় চড়ে রাত ১টার দিকে আজিমপুরের বটতলা এলাকায় বাসার সামনে নামেন।
“তখন লালবাগ থানার এসআই কালামের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ এসে তাঁদের কাছে জানতে চান, ‘এত রাতে বাইরে কেন?’ তাঁরা বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা জানালেও তাঁদের পুলিশের গাড়িতে উঠতে বলেন। তারা বলে, ‘তোদের কাছে ইয়াবা আছে।’ গাড়িতে উঠতে রাজি না হওয়ায় আমার ভাইকে মারধর শুরু করে। তখন আমাদের গাড়ি এসে পৌঁছালে আমি নেমে জানতে চাই, কেন মারা হচ্ছে?”
‘এর মধ্যে লালবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আসলাম মোল্লা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। তিনি এসেই এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিক ফখরুল শাহীনকে থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে আমার কলার ধরে টেনে গাড়িতে তুলতে যান। তখন আমার সঙ্গে থাকা বিয়ের অনুষ্ঠানের অতিথি ১০-১২ জন সাংবাদিক আমাকে তাঁর কাছ থেকে রক্ষা করেন।’
এ খবর শুনে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত আরো কয়েকজন সাংবাদিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র ঘটনাস্থলে চলে আসেন। তাঁরা পরিদর্শক আসলামসহ ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্যকে ঘিরে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তাঁরা।
পরে ভোররাত ৪টার পর মোবারক ও তাঁর সঙ্গীরা ঘটনাস্থল ছাড়লে পুলিশ সদস্যরাও সেখান থেকে চলে যান।
ঘটনাস্থলে ছিলেন এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিক ফখরুল শাহীন। তিনি বলেন, “বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে মোবারকের বড় ভাইসহ কয়েকজন সাংবাদিক অন্য আরেকজন সাংবাদিকের বাসায় যাচ্ছিলাম। এ সময় পথের মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে আমাদের নামিয়ে এসআই কালাম বলতে থাকেন, ‘এই ইয়াবা কই, ইয়াবা? এদের কাছে ইয়াবা আছে। সবাইকে গাড়িতে তোল।’ প্রতিবাদ করলে তখন জাহাঙ্গীর আলমকে মারধর করেন কালাম।”
ফখরুল শাহীন আরো বলেন, “এ ঘটনার প্রতিবাদ করি আমরা। কারণ, আমাদের কাছে মাদকজাতীয় কিছুই ছিল না। এরপর স্থানীয়রাও ঘটনাস্থলে চলে এসে পুলিশের গাড়ি আটকে দেয়। তখন ঝামেলা আরো বেশি শুরু হয়। এরপর লালবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। এসেই তিনি বলতে থাকেন, ‘সবাইকে গাড়িতে তোল, থানায় নিয়ে চল।’ আমি ছবি তুলতে গেলে আমাকে থাপ্পড় মারেন।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে লালবাগ থানার পরিদর্শক আসলাম মোল্লা বলেন, ‘পুলিশ রাতে যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সেভাবেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু এরা সেটাকে ভিন্ন দিকে নিয়ে বলছে, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছে।’