‘পেঁয়াজের কাস্টমারই বেশি’, টিসিবির ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন
সকাল ১১টা। রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় দীর্ঘ দুইটি লাইন। এক লাইনে নারী দাঁড়ানো, অন্য লাইনে পুরুষ। একটি ট্রাককে ঘিরে ওই লাইন। ট্রাকে ব্যানার টানানো। ব্যানারে লেখা, ‘এখানে টিসিবির পণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করা হয়। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা।’ ওই পেঁয়াজই এখানকার মানুষের প্রধান আকর্ষণ।
দুই লাইনে শতাধিক মানুষ হবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁরা এসেছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ট্রাকে উঁকি দিয়ে দেখা গেল সেখানে আছে আটা, ডাল, চাল, তেল আর পেঁয়াজ। তবে টিসিবির ট্রাকসেলের বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম মনির কেবল পেঁয়াজ মাপতে মাপতেই ঘেমে যাচ্ছেন। আটা, তেল কেউ কেনে না? জানতে চাইলে মনির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পেঁয়াজের কাস্টমারই বেশি।’
অস্থিতিশীল হয়ে যাওয়া পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ বিক্রয় শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বাজারে যেখানে পেঁয়াজের মূল্য১০০-১২০ টাকা, টিসিবি সেখানে বিক্রয় করছে ৪৫ টাকা কেজিতে।
মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, ‘গতকাল থেকে পেঁয়াজের কাস্টমারই বেশি। প্রতিদিন আমরা ৪০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রয় করি। লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের প্রতিজনের কাছে দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি করি না আমরা। যাতে সবাই কিনতে পারে।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মাহমুদুল হাসান সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছেন। তিনি পেঁয়াজ কেনার জন্য দাঁড়িয়েছেন। মাহমুদুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাজারে গিয়া দেখি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা। পরে না কিনে চলে আসলাম। এখান থেকে নিয়ে যাব।’
কথা হয় রিমা আক্তার নামের এক গৃহিণীর সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এক কেজি পেঁয়াজের দাম যদি হয় ১২০ টাকা তাহলে রান্নাবান্না করমু কেমনে। পেঁয়াজ ছাড়া কি রান্না করা যায়? হুট করে দাম ১২০ টাকা হলো। এখানে বেচে ৪৫ টাকা।’ পেঁয়াজ ছাড়া আর কী কিনবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাকিগুলো বাজারের মতোই দাম, তাই শুধু পেঁয়াজ কিনুম।’
হারুন নামের একজন বলেন, ‘কিছু লোকের কারণে আজ এ অবস্থা । সব জায়গায় তারা সিন্ডিকেট করে । খাইতে সিন্ডিকেট, ঘুমাতে সিন্ডিকেট, ব্যবসা- বাণিজ্য সব জায়গায় সিন্ডিকেট। শেষপর্যন্ত পেঁয়াজেও নাকি সিন্ডিকেটের আসর পড়ছে। মন্ত্রী বলেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে এমনটা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? সবই কপাল।’
ধানমণ্ডি থেকে যাত্রী নিয়ে একজন রিকশা চালক খামার বাড়ি পর্যন্ত যান। টিসিবির ট্রাক দেখে তিনিও লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজ ছাড়া রান্না হয়। এখানে দাম কম। তাই কিছু পেঁয়াজ এখান থেকে কিনে নিমু।’
পশ্চিম রাজাবাজার থেকে এসেছেন মাহমুদ আলম। তিনি বলেন, ‘ব্যাচেলর মানুষ। ডিম আর ডালের ওপর নির্ভর করি। ডিম ভাজতে পেঁয়াজ লাগে। আর তার দাম কেজি ১২০ টাকা, তাই এখানে আসলাম ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে।’
দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত ১ অক্টোবর টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে সরকার। গত সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, ‘এ মুহূর্তে সরকারের কাছে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ আছে। দাম বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
সচিব আরো বলেছেন, ‘যত দিন বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল না হবে তত দিন ট্রাকে করে বিক্রি করবে টিসিবি।’