অভিযোগপত্রে ডিসি, এডিসিসহ তিন কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়ায় নারাজি
ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি তহবিলের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও নয় কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অপরাধে দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রে মূল তিন অভিযুক্তকে বাদ দেওয়ায় নারাজির আবেদন করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়া মো. ফেরদৌস।
বাদপড়া এ তিন অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন কিশোরগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর ও সাবেক অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. মাইনুল হক।
এ তিন অভিযুক্তকে আসামি না করায় আজ রোববার সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. সায়েদুর রহমানের আদালতে তিনি নারাজির আবেদন করলে বিচারক তা গ্রহণ করেন। বিচারক আবেদনটি গ্রহণ করে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য আগামী ৩০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
এর আগে ঘটনার ২০ মাস পর চলতি বছরের ১০ জুলাই নয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ।
অভিযোগপত্রে নয় আসামির মধ্যে রয়েছেন সাবেক জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম, সাবেক জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম, জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের সাবেক সুপার মো. গোলাম হায়দার, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সাময়িক বরখাস্তকৃত অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সাময়িক বরখাস্তকৃত অফিস সহায়ক মো. দুলাল মিয়া, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ম্যানেজার (এজিএম) মো. মাহবুবুল ইসলাম খান, পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের কিশোরগঞ্জের শাখার ব্যবস্থাপক মো. মোখলেছুর রহমান, মো. আমিনুল ইসলাম ও মো. জাহাঙ্গীর আলম।
গত বছরের ১৭ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক রামপ্রসাদ মণ্ডল বাদী হয়ে জেলার সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) মো. সেতাফুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় ‘হাওর এলাকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প’-এর জন্য ২৭৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসব জমির মালিককে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার সময় জালিয়াতির আশ্রয় নেন কিশোরগঞ্জের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম। জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে চেকের মাধ্যমে সেতাফুল ইসলাম পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাত করেন।
এছাড়া ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় থাকা আরো নয় কোটি টাকার চেক থেকে উত্তোলন প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে আটকে যায়। মামলায় সেতাফুলের বিরুদ্ধে জাল দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
এ ঘটনায় গত বছরের ১৭ জানুয়ারি সেতাফুল ইসলামকে আটকের পর ২৯ জানুয়ারি জিজ্ঞসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সেতাফুল ২ ফেব্রুয়ারি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর, সহকারী ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম এবং জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও অফিস সহায়ক মো. দুলাল মিয়াসহ আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘টাকা আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে তাঁরাও জড়িত।’
সেতাফুল ইসলাম আরো জানান, জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কথামতো উনারা দুজনসহ কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে তিনি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আত্মসাৎ হওয়া টাকার বেশিরভাগ অংশ উনারা নিয়ে গেছেন।
ওই সূত্র ধরে ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও পিয়ন দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তিনদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা জানান।
ওই তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পাঁচকোটি টাকা উত্তোলনের পর কিশোরগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাসকে এক কোটি, সাবেক অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. মাইনুল হককে ২০ লাখ, কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধরকে ১৫ লাখ, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার মো. মুখলেছুর রহমানকে ৫০ লাখ, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর এস এম জামানকে পাঁচ লাখ টাকা, অফিস পিয়ন দুলাল মিয়াকে এক লাখ টাকা দেওয়া হয় বলে জানা যায়।
নারাজি প্রদানকারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়া মো. ফেরদৌস জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি যথাযথভাবে তদন্ত করেনি। তদন্তকারী কর্মকর্তা অন্যায়ভাবে প্রভাবিত হয়ে মনগড়াভাবে মামলাটি তদন্ত করে গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের বাদ দিয়েছেন। তাই আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উক্ত তিন আসামির অন্তর্ভুক্তির আবেদন জানিয়েছি।
তবে এ ব্যাপারে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বাদীপক্ষে নারাজি আবেদন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসরাম নুরু। এ সময় দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।