মা-বাবা নেননি, নবজাতকটির কী দোষ?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্ম নেওয়া নবজাতককে রেখেই চলে যান তার মা-বাবা। আটদিন পর মা নাহার বেগম গেলেন হাসপাতালে। নিজের শিশুকে আদর করলেন। কিন্তু সঙ্গে করে নিলেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিলেন ওই নবজাতককে নেবেন না তিনি, দত্তক দেবেন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভোরে কন্যা শিশুটির জন্ম হয়। পরের দিন সন্ধ্যা থেকেই হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যান শিশুর মা নাহার। ওই ঘটনার আটদিন পর আজ রোববার হাসপাতালে গেলেন নাহার।
নাহার জানান, এই কন্যা সন্তানের বাবার নাম রাসেল। রাসেল তাঁর দ্বিতীয় স্বামী। গর্ভবতী হওয়ার তিন মাস পর রাসেল তাঁকে ফেলে চলে যায়। নাহারের প্রথম স্বামীর নাম আজাদ। তাঁর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর নাহার রাসেলকে বিয়ে করেন।
রাসেল পালিয়ে যাওয়ার পর নাহার তাঁর প্রথম স্বামী আজাদের কাছে যান। আজাদই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। সব খরচ আজাদই দেন। কিন্তু শিশুটি জন্ম নেওয়ার পর দুজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এরই রেশ ধরে দুজনই শিশুটিকে ফেলে চলে যান।
নাহার আরো জানান, নবজাতকটি রাসেলের হওয়ায় প্রথম স্বামী আজাদ নবজাতকটিকে গ্রহণ করছেন না। সে জন্য নিজের সন্তানকে দত্তক দিতে চান। যদি কোনো ভালো পরিবার নিতে চায় তাহলে সেই পরিবারকে দত্তক দেবেন।
নাহার ও আজাদ দম্পতির বাড়ি সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকায়। বর্তমানে মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের মাজার রোড লালকুঠি এলাকায় থাকেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের ওয়ার্ড মাস্টার আব্দুল গফুর বলেন, ‘হাসপাতালের নথিতে দেখা যায় ১৩ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিজারের মাধ্যমে ভূমিষ্ট হয় এই মেয়ে নবজাতকটি। হাসপাতালের নথিতে দেখা যায় নবজাতকটির মায়ের নাম নাহার ও বাবার নাম রাসেল। ঠিকানায় লেখা ছিল মিরপুর ১।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা ও সন্তান সুস্থ থাকার কারণে ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে শিশুর কাছে কাউকে পাওয়া যায়নি।
আব্দুল গফুর আরো বলেন, ‘ওই নবজাতককে আমরা ঢামেক হাসপাতালের ২১১ নম্বর নবজাতক বিভাগে নিয়ে এসেছি। সেখানে চিকিৎসকরা বাচ্চাটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং তার ওজন মেপে দেখেছে নবজাতকের ওজন ২ কেজি ৪০ গ্রাম। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটি সুস্থ আছে। নবজাতকটি এখন হাসপাতালের হেফাজতেই আছে। বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হয়েছে।’
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল খান জানান, পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে চলে যাওয়ায়ই নবজাতকের মা তার সন্তানকে নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠিও দিয়েছেন।