তাহেরীর বক্তব্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের প্রমাণ মেলেনি : বিচারক

ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে মুফতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তাহেরীর বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। বিচারক খারিজের আদেশে বলেছেন, ‘বাদীর দাখিলকৃত ভিডিওগুলো ধর্মীয় বক্তব্য। এখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কোনো প্রমাণ মেলেনি। বক্তব্যে আইনবহির্ভূত কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।’
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আ স ম জগলুল হোসেন মামলা খারিজের আদেশে এ কথা বলেন।
বিচারক আদেশে বলেন, ‘মামলায় দাখিলকৃত পেনড্রাইভ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একেকজনের মতপ্রকাশ একেক রকম। বাদীর অভিযোগ মতে, আইনের কোনো অবনতি বা ক্ষয় ঘটেনি। আমি এখানে পর্যাপ্ত কারণ পাচ্ছি না মামলা আমলে নেওয়ার। তাই মামলাটি সরাসরি খারিজের আদেশ দেওয়া হলো।’
মামলার বাদী ইব্রাহিম খলিল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিচারক তাহেরীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি সরাসরি খারিজের আদেশ দিয়েছেন। আমি ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশনে যাব। আজই আদালতের আদেশের সার্টিফাই কপি তোলার জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে সার্টিফাই কপি পেয়ে যাব।’
এর আগে গত রোববার বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আ স ম জগলুল হোসেনের আদালতে আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই দিন বিচারক বাদীর জবানবন্দি শুনে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।
মামলার বাদী ইব্রাহিম খলিল আরজিতে উল্লেখ করেন, ‘আসামি একজন ভণ্ড। তিনি নিজেকে মুফতি দাবি করলেও ইসলাম সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ আছে। ওয়াজ-মাহফিলে আসামি ভক্তদের নিয়ে নেচে গান গাওয়া শুরু করেন। তাঁর এসব কর্মকাণ্ড ইসলামে বিদআত বলে গণ্য। তিনি ইসলাম ধর্মের অপপ্রচারকারী, ভণ্ড ও প্রতারক।’
আরজি থেকে জানা গেছে, গত শনিবার সকাল ১০টায় বাদী ইব্রাহিম খলিল চেম্বারে এসে মেঘনা টিভি সিএম নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পান, ওয়াজে ইসলামকে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। ওয়াজ করছিলেন মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী।
মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরীর বিরুদ্ধে ইসলামকে ব্যঙ্গ করার অভিযোগে করা মামলার আরজিতে বলা হয়, ‘যেহেতু বাদী একজন বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক, পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, অত্যন্ত শান্তশিষ্ট, সহজ-সরল, দেশপ্রেমিক, আইন মান্যকারী একজন প্রথম শ্রেণির নাগরিক বটে। অপরদিকে আসামি (তাহেরী) একজন ভণ্ড, প্রতারক, স্বার্থপর, ধর্ম ব্যঙ্গ প্রচারকারী।’
মামলার আরজিতে বলা হয়, আসামি একজন ভণ্ড। তিনি নিজেকে মুফতি দাবি করলেও ইসলাম সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ আছে। ওয়াজ-মাহফিলে আসামি ভক্তদের নিয়ে নেচে গান গাওয়া শুরু করেন। যেহেতু পবিত্র কোরআনের বিধিনিষেধ ও ইসলাম ধর্মের পথ প্রদর্শক হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ অনুযায়ী ইসলাম ধর্ম পরিচালিত হলেও ধর্মীয় কোনো গ্রন্থ আসামির ওয়াজ-মাহফিলের মধ্যে নাচ-গান সমর্থন করে না। ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী তাঁর কর্মকাণ্ড মুনাফিকের শামিল।
আরজিতে বলা হয়, আসামি ইউটিউব চ্যানেলের লিংকের চার মিনিট ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যেখানে আসামি একটি ওয়াজে বলেন, ‘ইউনিভার্সিটির কিছু মাইয়া আছে। হেরা মডেলিং করে তোয়ার কপালে বেহেশত নেই।’
তাঁর এ বক্তব্য গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কে বেহেশতে যাবে, কে যাবে না—সেটা একমাত্র ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহই জানেন।
আরজিতে আরো বলা হয়, আসামির করা অপর ভিডিওতে বলা হয়, একজন তাহাকে জিজ্ঞাসা করেন, বিড়ি খাওয়ার দোয়া কোনটা? তখন আসামি বক্তব্যে বলেন, ‘আল্লাহুম্মা বারেক লানা ফি মা বিড়ি টানা’—এ ধরনের কোনো দোয়া ইসলামের কোথাও বলা নেই। ওই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে ব্যঙ্গ ও অবমাননা করা হয়েছে।
অপর ভিডিও লিংকে দেখা যায়, আসামি বলেছেন, ‘বসেন, বসেন বইসা যান। ঢেলে দিই।’ এ ধরনের সম্পূর্ণ অশ্লীল শব্দ ইসলাম ধর্মে উল্লেখ নেই। আসামি ওই লিংকের ভিডিওতে আরো বলেন, কিছু কিছু ইউটিবার ‘ধান্দাবাজ’ তিনি ‘চিশতীবিডি’ (chistybd) নামের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করার আহ্বান জানান।
আরজিতে উল্লেখ করা হয়, তাহেরীর এসব কর্মকাণ্ড ইসলামে বিদআত বলে গণ্য। তিনি ইসলাম ধর্মের অপপ্রচারকারী, ভণ্ড ও প্রতারক। ইউটিউব, ফেসবুকসহ তাঁর প্রচারিত ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, তিনি ওয়াজের মধ্যে নাচ-গান করেন। ইসলাম ধর্মে নাচ-গান হারাম হলেও তিনি ভক্তদের নিয়ে নাচছেন। একটি ভিডিওর লিংকে ১০-১২ জন ভক্তকে তাঁকে নিয়ে নাচতে দেখা যায়। যেহেতু আসামির (গিয়াস উদ্দিন তাহেরী) এসব কর্মকাণ্ড আসামি নিজে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে ইসলামের ধর্মীয় অনূভূতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত সৃষ্টি করেছেন। আসামির এসব ওয়াজ মাহফিলের নামে ভণ্ডামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইনে প্রচার করে ইসলাম ধর্মের মধ্যে ঘৃণা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে এবং মানুষকে ধর্মীয় সঠিক শিক্ষা না দিয়ে ভুল বুঝিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট করে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর উপক্রম রয়েছে।
আসামির এসব বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ড ভাইরাল হয়ে আলোচনার জন্ম দেয়। আসামির এসব কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। মামলায় যথেষ্ট চাক্ষুষ ও দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণাদি রয়েছে। বাদী পরবর্তী সময়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করায় মামলায় কিছুটা বিলম্ব হয় বলে উল্লেখ করেন।
এর আগে তাহেরীর ওয়াজের ভিডিও ভাইরাল হলে তাঁকে পুলিশি নজরদারিতে রাখা হয়। এ ছাড়া তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।