সংসদ নির্বাচনে ডাব নিয়ে ‘ডাব্বা মেরেছিলেন’ তাহেরী

‘ভাই, পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হইচই আছে?’ মুফতি মো. গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর এ রকম কিছু মন্তব্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করেন তিনি।
তাহেরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। তাহেরীর প্রতীক ছিল ডাব।
নির্বাচনে অংশ নিয়ে ডাব প্রতীকের প্রচারে মানুষের কাছে গিয়েছিলেনও তাহেরী। তাঁর ওয়াজ-মাহফিলগুলো ইউটিউব ও ফেসবুকে ভাইরাল। প্রায় সব ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্যই ইউটিউবে পাওয়া যায়। সেই ইউটিউবেই পাওয়া গেল তাঁর নির্বাচনী প্রচারের কার্যক্রম।
তবে তাহেরী পাস করতে পারেননি। তিনি ভোট পেয়েছিলেন তিন হাজার পাঁচটি। ওই আসনে জয়ী হন বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা তাহেরীর হলফনামা থেকে জানা গেছে, তিনি কামেল পাস করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। তাঁর পেশা ব্যবসা। এই খাত থেকে তিনি বছরে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করেন। এ ছাড়া পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শ ইত্যাদি) থেকে বছরে এক লাখ টাকা আয় করেন বলে জানান। এ ছাড়া তিনি কৃষি খাত থেকে বছরে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। তবে তাঁর কতটুকু কৃষি জমি আছে সেটা উল্লেখ করেননি। হলফনামায় কৃষি ও অকৃষি জমিজমার ঘরে ‘প্রযোজ্য নহে’ কথাটি উল্লেখ করেন। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকা দেখিয়েছেন এক লাখ ৫০ হাজার। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি আছে এক লাখ টাকা মূল্যমানের। আসবাবপত্র হিসেবে খাট, সোফা ইত্যাদি আছে এক লাখ ২০ হাজার টাকার। তাঁর স্ত্রীর দুই লাখ টাকা মূল্যমানের পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার আছে।
তাহেরী, তাঁর স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে কৃষি জমি, অকৃষি জমি, দালান, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্টসহ অন্যান্য সম্পত্তির ঘরে ‘প্রযোজ্য নহে’ কথা লেখা আছে। তাঁর কোনো দায় ও ঋণ নেই।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করেন মুফতি মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী। জানা যায়, তিনি ‘দাওয়াতে ঈমানী বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া তাহেরীর বক্তব্যগুলো ইউটিউব, ফেসবুকে পাওয়া যায়। তাঁর বলা ‘একটু চা খাব? খাই একটু? আপনারা খাবেন? ঢেলে দেই?’ ‘ভাই, পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হইচই আছে?’, ‘বসেন, বসেন, বসে যান’ এই শব্দগুলো এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা। মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এসব শব্দ বা বাক্যগুলো ‘উসকানিমূলক’ হিসেবে দেখছে। তাই তারা ওই বক্তাকে রাখছে নজরদারিতে।
আজ বুধবার পুলিশ হেডকোয়াটার্স ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকদিন ধরে পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছে মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর নামে। অভিযোগ তুলছে, তাঁর অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গি নিয়েও। ফলে স্বাভাবিকভাবে তাঁর কার্যক্রম মনিটরিং করছে পুলিশ। যেখানে আত-তাহেরী নতুন করে ওয়াজ মাহফিল করবেন সেখানেও থাকছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছেন, মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীকে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সামাজিক মূল্যবোধ বজায় রেখে ওয়াজ করতে। তাঁর কারণে ধর্মীয় কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হলে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। এ কথাগুলো তাহেরীসহ কয়েকজন বক্তাকে প্রাথমিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওয়াজ করার সময় অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য কিংবা অশ্লীল বাক্য বলা যাবে না। যদি কেউ এরূপ করে থাকেন এবং সেই বক্তব্য যদি সামাজিকভাবে বাজে প্রভাব ফেলে তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এই মনিটরিংয়ের কাজগুলো আমরা করে থাকি।’
সাইদ নাসিরুল্লাহ আরো বলেন, ‘মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর কয়েকটি ভিডিও আমি দেখেছি। সেগুলো ডাউনলোড করেও রেখেছি। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। শুধু তাহেরী নন, এ রকম আরো কয়েকজনকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। আমরা তাদের উদ্দেশ্যকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
তাহেরীর বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর কথা আমিও শুনেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ওয়াজের সময় তাঁর বক্তব্যের ভেতরে যদি কোনো ধরনের কুরুচিপূর্ণ ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করা হয় আর সেটা যদি সামাজিক, ধর্মীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ নষ্ট করে তাহলে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সেটা মেনে নেবে না।’
সোহেল রানা বলেন, ‘কেন সে এই ধরনের বক্তব্য ব্যবহার করছে, তা আমি জানি না। তবে যদি তাঁর উদ্দেশ্য অসৎ হয় তবে আমরা অব্শ্যই তাঁকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। অশ্লীল কথা কিংবা অঙ্গ-ভঙ্গি কোনোটাই আমাদের সৌহার্দ্যবোধের সংস্কৃতিতে কাম্য নয়। তাঁকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি।’