ঢাবি শিক্ষার্থীকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় পঙ্গু হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শামীমকে কেন পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে শামীমকে কেন বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক,বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি,স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তার কৃষ্ণা প্রভু ও ম্যানিজিং ডিরেক্টরসহ সাতজনকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া স্কয়ার হাসপাতালে শামীমের অপারেশন করার সময়ের সিডি ও চিকিৎসার সব রেকর্ড আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ক্ষতিপূরণ চেয়ে শামীমের পক্ষে করা এক রিটের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারি করে এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া,আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া ও ফুয়াদ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক।
গত ১৪ জুলাই শামীমের পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রিটে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ভুল চিকিৎসায় পঙ্গু ঢাবি ছাত্রের ক্ষতিপূরণ দাবি’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।
গত ১৯ এপ্রিল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করে শামীম জানান,সামান্য শারীরিক সমস্যা নিয়ে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি স্কয়ার হাসপাতালে ডা. কৃষ্ণা প্রভুর কাছে যান। ওই সময় চিকিৎসক বলেন,তার মস্তিষ্কের রক্তনালিতে টিউমার বা ইনসুলার ক্যাভারনোমা হয়েছে। দ্রুত অপারেশন না করলে যেকোনো সময় তিনি স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন। ওই সময় কৃষ্ণা প্রভু নিজেকে সিএমসি ভেলোরের সিনিয়র কনসালট্যান্ট দাবি করে বলেন, ‘এ সমস্যা সামান্য, এ জন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। তিনি সহজেই এই অপারেশন করতে পারবেন।’
সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে না জানিয়েই গত ২৩ জানুয়ারি স্কয়ার হাসপাতালে ওই অপারেশন হয় বলে জানান শামীম। তিনি বলেন, ‘অপারেশনের পর আইসিইউতে থাকাবস্থায় আমার ছোট ভাইকে আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। ২৫ তারিখে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আমার শরীরের বাম পাশ আর কাজ করছে না। উন্নত চিকিৎসার সুবিধার্থে চিকিৎসকের কাছে আমার অপারেশনের সিডি চাইলে তিনি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দিতে টালবাহানা শুরু করেন। এ নিয়ে ১ এপ্রিল স্কয়ার হাসপাতালের সিইও ইউসুফ সিদ্দিকীর কাছে অপারেশনের সিডির জন্য গেলে গোঁজামিল হিসাব দেন। পরে ৭ এপ্রিল সিইও বরাবর আমার অপারেশন সিডি ও রোগীর ফাইল চেয়ে লিখিত আবেদন করি। কিন্তু তারা আবেদন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান।’
‘গত ১৫ এপ্রিল চিকিৎসক কৃষ্ণা প্রভুর সঙ্গে দেখা করলে তিনি জানান, অপারেশনের সময় আমার মস্তিষ্কের কয়েকটি নার্ভ কাটা গেছে। এ সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি আমাকে থাইল্যান্ড অথবা সিঙ্গাপুর যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অপারেশনের আগে এই ঝুঁকি সম্পর্কে জানাননি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, তার কারণেই নাকি আমি পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছি। অন্য কেউ অপারেশন করলে আমি মরেও যেতে পারতাম,’- বলেন শামীম।
শামীম জানান, চিকিৎসাবাবদ এ পর্যন্ত তার চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফলে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের খরচ তার পরিবারের পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ডাকসু ও সরকারের কাছে স্কয়ার কর্তৃপক্ষের অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতায় পঙ্গুত্ববরণের বিচার দাবি করেন। এ ছাড়া স্বাভাবিক জীবনের জন্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
এরপর এ বিষয়ে কোনো সমাধান না পেয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে রিট করেন শামীম। ওই রিটের পর আজ আদালত রুলসহ আদেশ দিলেন।