উজানধলে শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে কালনী নদীর তীরে উজানধল গ্রামে শুরু হয়েছে শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব। বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের ৯৯তম জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এই উৎসব শুরু হয়।
বাউলসম্রাটের জন্মদিনকে ঘিরে অন্যান্য বছরের মতো এবারও উজানধলে সুরের ঢেউ লেগেছে। বাউলসম্রাটের ছেলে শাহ নূরজালালের সভাপতিত্বে গতকাল বিকেল ৫টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ড. আহমদ উল্লাহ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দিরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজুল ইসলাম, গ্রামীণফোনের সিলেট বিভাগের ব্যবস্থাপক সাদিকুর রহমান ও সিলেট অঞ্চলের বাউলশিল্পী বাবুল আহমেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আহমদ উল্লাহ বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সহজ ভাষায় সমাজের নিপীড়িত অসহায় মানুষের জন্য গান রচনা করে গেছেন।
দুই দিনব্যাপী লোক উৎসব আজ শনিবার ভোররাত পর্যন্ত চলবে। হাজারো মানুষের পদচারণে মুখর ছিল বাউলের জন্মস্থান। বাউলের উজানধলের বাড়িতে একটি সংগীতনিকেতন এবং বাড়িকে ঘিরেই শাহ আবদুল করিম একাডেমি বা জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন উৎসবে আসা বাউল-শিষ্য ও ভক্তরা।
বাউলসম্রাটের ছেলে নূরজালাল বলেন, ‘শাহ আবদুল করিম নানা অভাব-অনটন, দুঃখ-দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর (শাহ আবদুল করিম) বয়স যখন ১২, রাখালের চাকরি ছেড়ে গ্রামের পাশের ধলবাজারের এক মুদির দোকানে কাজ নিলেন। দিনে চাকরি আর রাতে হাওরে ঘুরে গান গাওয়ার মধ্য দিয়েই বেড়ে ওঠা তাঁর। গ্রামের নৈশ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পড়াশোনা বাদ দিয়ে গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাউলা, ভাটিয়ালি, পালাগান গাইতে গাইতে পুরো ভাটি অঞ্চলে নাম ছড়ায় তাঁর। এরপর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষার লড়াই, কাগমারী সম্মেলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গণসংগীত গেয়ে গেয়ে লাখ লাখ তরুণকে উজ্জীবিত করেছেন এই বাউলসম্রাট। গান গাওয়ার জন্য ধর্মান্ধদের হাতে নির্যাতিত ও ঘরছাড়া হলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান প্রচার করে গেছেন।’
শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।