ছাগল ছিনতাইচেষ্টার মামলায় ছাত্রলীগের তিন কর্মী কারাগারে
২১২টি ছাগল ছিনতাইচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মুজাহিদ আজমী তান্নাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার তিন আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা (জিআরও) মো. হামিদুর রহমান বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
হামিদুর রহমান জানান, গত ১২ আগস্ট ইয়াসির আরাফাত, জাহিদুল ইসলাম ও মো. রায়হানকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করলে তাদের প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন বিচারক। রিমান্ড শেষে গতকাল বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে তাদের হাজির করা হলে মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডল তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
হামিদুর জানান, এ ছাড়া গতকাল এ তিন আসামির পক্ষে আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলে বিচারক আগামী ২০ আগস্ট জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।
এদিকে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শরীফুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ছাগল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম গত ১১ আগস্ট নয়জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ৫১। মামলায় ইয়াসির আরাফাত, জাহিদুল ইসলাম ও মো. রায়হানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই তিন আসামিকে আটক করে র্যাব-২ থানায় সোপর্দ করে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, যশোরের বারোবাজার পশুরহাট ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকা থেকে ১১ আগস্ট সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান পাঁচজন ছাগল ব্যবসায়ী। তাঁরা একটি ট্রাকে করে ২১২টি ছাগল নিয়ে আসেন। ব্যবসায়ীরা মোহাম্মদপুরের বাবর রোড এলাকায় গেলে জহুরি মহল্লা এলাকায় তাঁদেরকে ছাগলসহ আটকে রাখা হয়। ছিনতাইকারীরা ছাগলগুলো ট্রাক থেকে নামিয়ে একটি ক্লাবের ভেতরে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, ফারুক বিশ্বাস, মোহাম্মদ মাসুদ, বাবু খান, শেখ সোলেমান ও মো. নুরুজ্জামানকে আটকে রাখেন। পরে র্যাব-২-এর একটি টহলদল জিম্মিদশা থেকে ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করেন।
ব্যবসায়ীদের যখন উদ্ধার করা হয় তখন র্যাব-২-এর কমান্ডিং অফিসার পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১১ আগস্ট অর্থাৎ ঈদের আগের দিন দুপুর ১২টার সময় ব্যবসায়ীরা প্রথমে আমাদের ফোনে খবর দেন। খবর দিয়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বাবর রোডে ২১২টি ছাগল ছিনতাই করে করে ট্রাকসহ আটকে রাখা হয়েছে। সে সময় মোহাম্মদপুর এলাকায় র্যাবের একটি মোবাইল টিম কাজ করছিলেন। পরে মোবাইল টিমসহ আমরা ঘটনাস্থলে যাই।’
মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা একটি ক্লাব ঘরের ভেতরে ছাগল ব্যবসায়ীদের আটক অবস্থায় পাই। সেখানে তিনজন ছিনতাইকারী উপস্থিত ছিলেন। পাশে একটি মাচা করা ট্রাকের ওপর-নিচে মিলে মোট ২১২টি ছাগল ছিল। পরে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্দেশে আমরা ব্যবসায়ীদের ও ছিনতাইকারীদের মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করি।’
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে শরীফুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত তিনজন ছাড়া মামলার এজাহারভুক্ত আরো ছয়জন আত্মগোপনে আছেন। তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি আমরা। গ্রেপ্তারকৃত ওই তিনজনকে এক দিন করে রিমান্ড নেওয়া হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে আরো পাঁচ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।’
এই মামলার তদন্ত কর্মকতা সজীব ঘোষ। র্যাব তিনজনকে থানায় সোপর্দ করার পর সজীব ঘোষ তিন আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেন। রিমান্ডে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছেন বলে জানান সজীব ঘোষ।
সজীব ঘোষ আসামিদের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাবর রোডের ছাত্রলীগ অফিসের কাছাকাছি স্থানে একটি অস্থায়ী ছাগলের হাট বসান। ওই হাটে ছাগল ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রাখতেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জিম্মি করে চাঁদা দাবি করতেন তারা। ছাত্রলীগের তৈরি ওই হাটে ছাগল রাখতেও জোর করা হতো ব্যবসায়ীদের।’
সজীব ঘোষ আরো বলেন, ‘জিম্মি করে রাখার এমন অনেক অভিযোগ আমরা আগে পেয়েছি। অভিযোগ পেয়ে আমরা গেলে তারপর ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মামলার আসামিরা সবাই মোহাম্মদপুরের পরিচিত মুখ। স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’