৩০ মণ ওজনের ‘মহারাজ’, দাম কত জানেন?
আদর করে গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘মহারাজ’। রাজার মতনই দশাসই দেখতে। সাদা-কালো ছোপ মারা ‘মহারাজের’ ওজন এক হাজার ২০০ কেজি বা ৩০ মণেরও বেশি। বিশাল আকৃতির গরুটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে শত শত মানুষ।
‘মহারাজ’ কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের চণ্ডীবেড় এলাকার খামারি মো. জাকির হোসেনের পালন করা ফ্রিজিয়ান ক্রস প্রজাতির ষাঁড়। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে শখের বশে, অনেক যত্নের সঙ্গে এটিকে লালনপালন করেছেন জাকির। এরই মাঝে বিক্রির জন্য তিনি ‘মহারাজের’ দাম হাঁকছেন ১২ লাখ টাকা। এ মৌসুমে ষাঁড়টি ১০ লাখ টাকার অধিক মূল্যে বিক্রি করা যাবে বলে তাঁর ধারণা।
মহারাজকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে দেশীয় খাবার খড়, খৈল, ভুসি, গুড়ের চিটা, লবণ, চাল, ডাল ও ছোলার গুড়া ইত্যাদি খাওয়ানো হয়েছে। মোটাতাজাকরণে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় কোনো মেডিসিন ব্যবহার হয়নি বলে জানান খামারি জাকির হোসেন।
জাকির ছাড়াও জেলার আরো অনেক খামারিই কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন প্রজাতির বড় আকার ও অধিক ওজনের গরু লালনপালন করছেন। আসন্ন ঈদ ঘিরে ভৈরবে গড়ে উঠেছে তিন হাজারের বেশি মৌসুমি খামার। এসব খামারে দেশি, ভারতীয়, নেপালি, সিন্ধি, শংকর জাতীয় গরুসহ মহিষ ও ছাগল পালন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে লালিতপালিত এসব গরু খাদ্য হিসেবে যেমন নিরাপদ, সেইসঙ্গে খামারিদের মুনাফাও থাকে যথেষ্ট।
উপজেলার কমলপুর এলাকার খামারি শাহাদাৎ সরকার জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরে গরু মোটাতাজাকরণের সঙ্গে জড়িত। এ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত তিনি লোকসানের মুখোমুখি হননি। এ মৌসুমেও তিনি ১০টি গরু কিনেছেন। সাড়ে তিন মাস আগে গড়ে ৬০ হাজার টাকা করে কেনা দেশি জাতের গরুগুলো এবারের ঈদের হাটে প্রতিটি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা তাঁর।
মৌসুমি এসব খামারে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান ও পর্যবেক্ষণের জন্য উপজেলায় তিনটি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করে বলে জানায় স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, এসব পশুতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় কোনো মেডিসিন ব্যবহার করা হয়নি।
তবে গরুর বাজার দর ঠিক রাখতে ভিনদেশি গরু আমদানি বা চোরাপথে গরু আনা ঠেকানোর দাবি খামারিদের।
এ প্রসঙ্গে এলাকার খামারি শাহিদ কবির দীপ্ত জানান, পশুর বর্তমান বাজারদর অটুট থাকলে তাঁরা লাভবান হবেন। তবে ঈদের আগে ভিনদেশি পশু আমদানি বা চোরাপথে দেশে গরু প্রবেশ করলে তাঁরা লোকসানের মুখে পড়বেন। এমনটি হলে মুনাফা নয়, পুঁজি হারিয়ে তাঁদের পথে বসতে হবে বলে জানান তিনি। সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সজাগ থাকবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই মানুষের কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে উল্লেখ করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এবারে দেশে উৎপাদিত পশুতেই দেশের মানুষের কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত হবে। তাই পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া অন্য দেশের পশু দেশে প্রবেশ করলে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বেন। এতে করে পরবর্তী বছরে খামার করায় নিরুৎসাহিত হবেন তাঁরা।’
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরো বলেন, ভৈরবে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য পুরোনো ও মৌসুমিসহ তিন হাজারেরও বেশি খামারে প্রায় সোয়া ১১ হাজার পশু প্রস্তুত। স্থানীয় সাড়ে আট হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়ে আড়াই হাজারেরও বেশি উদ্বৃত্ত পশু এবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা যাবে। পুরোপুরি দেশীয় খাবারের মাধ্যমে গবাদিপশু মোটাতাজা করা হয়েছে এসব খামারে। খামারগুলো মনিটর করার জন্য তিনটি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করেছে এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় মেডিসিন ব্যবহার করা থেকে খামারিদের বিরত রাখা হয়েছে। ফলে এখানকার পশুগুলো নিরাপদ।