গ্রামীণফোন কর্মকর্তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ
যৌতুক নেওয়ার দায়ে গ্রামীণফোনের (জিপি) গুলশান কার্যালয়ের কল সেন্টারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. সাইফুল রেজাকে দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। নয় মাস আগে ওই রায় দেওয়ার পর আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও রাজধানীর ভাটারা থানার পুলিশ আজো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ফলে এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন সাইফুল রেজা।
রায় হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আসামি সাইফুল রেজা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোসফেকা জাহান কনিকা জানান, পাবনা পৌর এলাকার বাসিন্দা ও এডওয়ার্ড কলেজের স্নাতকোত্তর পাস করা ওই তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ২০১২ সালের ১১ জুলাই বিয়ে করেন গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা যশোর শহরের শেখহাটি আদর্শপাড়ার মো সাইফুল রেজা। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরই সাইফুল রেজা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। মেয়েটিকে বেশ কয়েকবার মারধর করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহায়তায় সাইফুল রেজাকে আসামি করে পাবনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। বিচারক রেজাউল করিম চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি আসামি সাইফুল রেজাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। মামলার রায় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি স্মারক নম্বর-১৩৪ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর স্মারক নম্বর-২০০৭ এর মাধ্যমে আসামির বিরুদ্ধে আদালত থেকে যশোর কোতোয়ালি থানা ও ঢাকার ভাটারা থানায় পৃথকভাবে দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
মহিলা পরিষদের পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদিকা অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার জলি বলেন, দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি সাইফুল রেজা ঢাকার বসুন্ধরা বারিধারার ব্লক বি, প্লট ২৩৬-এ গ্রামীণফোনের ‘জিপি হাউসে’ বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন। অথচ যশোর সদর ও ঢাকার ভাটারা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। তিনি অবিলম্বে সাইফুল রেজাকে গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে মামলার বাদী ওই নারী অভিযোগ করেন, মামলার পর সাজা হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় তিনি আতঙ্কে আছেন। সাইফুল রেজা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাঁকে মীমাংসার প্রস্তাব দিচ্ছেন নয়তো ভালো হবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন।
সাইফুল রেজাকে গ্রেপ্তারের দায়িত্ব পেয়েছেন ভাটারা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফেরদৌস আলম। আজ মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, দু-এক মাস হলো তিনি এই থানায় এসেছেন। এর মধ্যে সাইফুল রেজাকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা পেয়েছেন কয়েক দিন আগে।
এএসআই ফেরদৌস জানান, গ্রামীণফোনে হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি করেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আসামি সাইফুল রেজার কোনো পদ-পদবি উল্লেখ করা নেই। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।
গ্রেপ্তারের জন্য এএসআই ফেরদৌস মামলার বাদীকে থানায় আসার অনুরোধ জানান। বাদী থানায় এলে তখন তাঁকে নিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে গ্রামীণফোনের কলসেন্টারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. সাইফুল রেজা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গ্রামীণফোনের কল সেন্টারে চাকরির সুবাধে ওই তরুণীর সঙ্গে পরিচয় ও প্রণয় ঘটে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই বিয়ে টেকেনি। আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’
ওই তরুণীকে হুমকি ও মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সাইফুল রেজা।