৯ বছরে ড্যাপ আওতাধীন সাড়ে ২২ হাজার একর জলাশয় ভরাট
গত ৯ বছরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের (ড্যাপ) আওতাধীন এলাকার ২২ শতাংশ জলাশয় ভূমি উন্নয়নের নামে অবৈধভাবে ভরাট করা হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশন্যাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতায় ঢাকা বিশদ অঞ্চল-ড্যাপের আওতাধীন ২২ হাজার ৫১৬ একর জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি দেশে আইনের শাসনের অভাব আর দুর্নীতির বড় উদাহরণ।
ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০১০-এর ভূমি ব্যবহারের ওপর পরিবেশবাদী সংগঠন বাপা, বেলা ও নিজেরা করিসহ পাঁচটি সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে একটি গবেষণা করে টিআইবি। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে নিজ কার্যালয়ে টিআইবি, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি), নিজেরা করি, এবং নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদ সাভারের সম্মিলিত আয়োজনে ‘ঢাকা ও এর চারপাশের জলাশয় ভরাটের চিত্র’ ও ‘সাভার অঞ্চলের জলাভূমি ভরাট’ শীর্ষক দুটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে দেখা গেছে, ২০১০ সালের পর থেকে ভূমি উন্নয়নের নামে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও সরকার নিজেও জলাশয় ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।
স্যাটেলাইটের চিত্র অনুযায়ী ২০১০ সালের পর সাভার অঞ্চলে ড্যাপের আওতাধীন ৩০ হাজার একর জমি দখল করা হয়েছে, যা মোট জলাশয়ের ১৫ শতাংশ। গাজীপুর সদর থানায় জলাশয় ভরাট হয়েছে ১৭ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন অঞ্চলের জলাশয় ভরাটের হার ৪১ শতাংশ, যার পরিমাণ ছয় হাজার ৭৮৬ একর। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ থানায় ভরাট হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮৯ একর। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ভরাট করা জলাশয় তিন হাজার ৪৮৩ একর।
সার্বিকভাবে ২০১০ সালে ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার বিভিন্ন অঞ্চলে এক লাখ ৯৩৭ একর জলাশয়ের মধ্যে ২২ হাজার ৫১৬ একরই ভরাট করা হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যে চিত্রটা দেখছি আমরা, সেটা অবশ্যই দুর্নীতির একটা প্রকট দৃষ্টান্ত। এখানে একটা প্রশ্ন কিন্তু জোরালোভাবে উত্থাপন করা যায়। আমাদের দেশে যখন এই চিত্র বিরাজ করে আইনের শাসন আছে কি না, সেটাই কিন্তু বড় প্রশ্ন।’
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মনে করছে, সরকারের নজরদারির অভাবেই কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রাজউকের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির যোগসাজশে অবৈধভাবে জলাধার দখল করছে। এসব অবৈধ দখলরোধে প্রযুক্তি নির্ভর মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেন তাঁরা।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, শুধু মানুষ পাঠিয়ে নয়, মেশিন পাঠিয়ে যদি মনিটরিং সিস্টেমটা চালু করে তবে সরকার এটা চালু করতে পারে। প্রথম সরকার দাবি করবে, আমার কাছে লোক নাই। রাজউক এই কথা বলেই বছরের পর বছর পার করেছে।
ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ২০ বছর কেস চলতে থাকবে। কে কেস চালাবে? জমি দখলের বিচার করতে হবে সাত থেকে আটদিনে। কারণ এটা জেলখানায় মানুষকে রেখে হত্যা করার মতো। আমরা ইঞ্চি ইঞ্চি মাপ করে বলতে পারি কে কোথায় কতটুকু জমি দখল করেছে।
নদীর জমি দখল করে মধুমতি মডেল টাউন গড়ে তোলার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায়কে সাধুবাদ জানায় টিআইবি। তবে রায়ের পর্যবেক্ষণে, রায় বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনায়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে খোদ আদালত যে সন্দিহান-সেই বিষয়টিই ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন ড. ইফতেখার।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মন্তব্য করেন, ‘মধুমতির রায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে। সেটির অর্থ হচ্ছে, রায় বাস্তবায়নের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া রয়েছে, সে প্রক্রিয়ার ওপর আদালতের আস্থা নেই।’