গ্রিনলাইনকে ৩টা পর্যন্ত সময় দিলেন হাইকোর্ট
বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারের চালক রাসেল সরকারকে আজ বিকেল ৩টার মধ্যে ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা পরিশোধ করতে গ্রিনলাইন পরিবহনের মালিককে বলেছেন আদালত।
আদালত বলেছেন, ‘৩টার মধ্যে রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকার কিছু অংশ না দিলে আমাদের (আদালত) মতো আমরা ব্যবস্থা নেব।’
বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ গ্রিনলাইনের মালিক মো. আলাউদ্দিন ও তাঁর আইনজীবীর উদ্দেশে করে এ কথা বলেন।
শুনানির শুরুতে রিটকারী উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এখনো গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেনি।’
এ সময় গ্রিনলাইনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের জন্য আবারও সময় চান।
তখন আদালত গ্রিনলাইনের মালিক ও আইনজীবীকে বলেন, ‘প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকার পা হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, আপনারা কোনো খোঁজ নিলেন না। একটা টাকাও দিলেন না। রাসেলের একটা পা কেটে ফেলা হয়েছে। আরেকটি পা-ও যাওয়ার পথে। আপনাদের ব্যবসা তো ঠিকই চলছে। মানবিকতারও তো একটা ব্যাপার আছে।’
এ সময় গ্রিনলাইনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ আদালতকে বলেন, রাসেল সরকারের চাকরির ব্যবস্থা করবে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ।
তখন আদালত বলেন, ‘আপনারা আগে বিকেল ৩টার মধ্যে আদালত যে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছি, সেটার কিছু অংশ পরিশোধ করে আসেন। তাহলে আমরা বুঝব, আপনারা আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। অন্যথায় আমাদের মতো করে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এরপর আদালত বিষয়টি শুনানির সময় বিকেল ৩টা নির্ধারণ করেন।
গত ৪ এপ্রিল বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন হাইকোর্ট।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার শামসুল হক রেজা। গ্রিনলাইনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. অজিউল্লাহ।
এর আগে গত ৩১ মার্চ গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিনলাইন পরিবহনের করা আবেদন খারিজ করে ওই দিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ।
গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথাকাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়ীতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তাঁর বাসা।
এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।