অবশেষে মুক্তি পেলেন ফজলু মিয়া
ফজলু মিয়া ছাড়া পাচ্ছেন—খবরটি বুধবার থেকেই সিলেট শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কারাফটকে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। মানুষের এমন আগ্রহের কারণ একটাই। এনটিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে সিলেটের মানুষ জানতে পারে, তাদের শহরের কারাগারে ফজলু মিয়া নামের এমন একজন রয়েছেন, যিনি বিনা বিচারে কারাগারে আটকে আছেন ২২ বছর ধরে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কারাফটকের বাইরে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ান ফজলু মিয়া। কারাগারের সামনের কারা কর্তৃপক্ষ ও ফজলুর গ্রাম ধরাধরপুরের মানুষ ফুলের মালা পরিয়ে তাকে সংবর্ধনা দেয়।
ফজলুর মুক্তি দেওয়ায় অংশ হতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কারা কর্তৃপক্ষও।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ছগির মিয়া বলেন, ‘আমি বিষয়টার জন্য আমার কর্তৃপক্ষ আইজি প্রিজনকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁকে আগেও এ বিষয়টা (ফজলু মিয়ার মুক্তির বিষয়) জানিয়েছি। তিনি বলেছিলেন, যতই বিরূপ মন্তব্য আসুক না কেন, তুমি কাজ করো।’
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সবার উদ্দেশে হাত ওপরে তোলেন ফজলু মিয়া। তাঁর মুখে তখন মুক্তির আনন্দ। আর কারাফটকের বাইরে গিয়েই তিনি তাঁর দক্ষিণ সুরমার পালক পিতা গোলাম মাওলার বাড়িতে যেতে চান। সেখানে গত ২২ বছরে অনেক কাজ জমে আছে বলে জানান তিনি।
জড়িয়ে যাওয়া কণ্ঠে ফজলু মিয়া বলেন, ‘আমি দক্ষিণ সুরমা গ্রামে গিয়া কাম করমু। নইলে কাম করমু না।’
ফজলুর জিম্মাদার কামাল উদ্দিন রাসেল বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত; আমার এলাকা, আমার ইউনিয়ন আজকে আপনাদের (এনটিভি) মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলো।’
সে সঙ্গে এমন নির্মমতার পেছনে যারা জড়িত, তাদের বিচারের দাবি জানান ফজলুর এই সহপাঠী।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান মিয়া জানান, ফজুলকে পুনর্বাসিত করার আগ পর্যন্ত তাঁকে তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের একটি বাড়িতে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে রাখা হবে।
এ জনপ্রতিনিধ বলেন, ‘এটা আমি ধরাধরপুর গ্রামবাসী নিয়ে, প্রয়োজনে আমার ইউনিয়নবাসী নিয়ে সর্বাত্মকভাবে তাঁর সম্পত্তি, তাঁর হক আমি উদ্ধার করে দেব।’
আর ফজলুর মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি জানিয়ে সিলেট জেলা দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানান, শিগগিরই ফজুলর বিরুদ্ধে সাজানো পাগল আইনের মামলা নিষ্পত্তি করে তাঁকে খালাস প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘ফজলুর মামলাটি আইনত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বিষয়টি জাস্ট প্রক্রিয়াধীন আছে। আগামী ২৩ তারিখ সেটা শেষ হয়ে যাবে।’
দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুরের মীরবাড়ির ফজলুর পালক বাবা গোলাম মাওলার মৃত্যুর পর তাঁকে ১৯৯৩ সালের ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। আর এসবের পেছনে সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্র ছিল বলে জানান তাঁর আইনজীবী।