বিদেশি খুন বিচ্ছিন্ন ঘটনা : সাতক্ষীরার এসপি
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেছেন, সম্প্রতি ঢাকায় ও রংপুরে দুজন সম্মানিত বিদেশি নাগরিক খুন হয়েছেন। সরকারকে বিব্রত করতে এবং বেকায়দায় ফেলতে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সাতক্ষীরায় কর্মরত সব বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা প্রদানে সাতক্ষীরা পুলিশ যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে।
বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পুলিশ সুপার এ কথা বলেন।
‘সবার জন্য আইন ও আইনের প্রয়োগও সবার জন্য সমান’ এ কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, সাতক্ষীরার মানুষ শান্তিপ্রিয়। তাঁরা কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ পছন্দ করেন না; বরং শান্তিতে জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে চান। এর পরও সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা আছে বলেই আইন প্রয়োগে সতর্ক থাকতে হয়।
জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ভালো মন্তব্য করে পুলিশ সুপার বলেন, সাতক্ষীরা বাংলাদেশের মডেল হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। এটা পুলিশ ও জনগণের যৌথ অর্জন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাতক্ষীরার পুলিশপ্রধান বলেন, চলমান রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল আটক অভিযানে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হলেও ট্রাফিক আইনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই এ অভিযান। সবার জন্যই এ আইন প্রযোজ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজের নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্যের নিরাপত্তার বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার সড়কে সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রত্যেকে যদি ট্রাফিক আইন মেনে চলেন, তাহলে সড়কে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। এখন থেকে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না থাকলে গাড়ি জব্দ করে মামলা দেওয়া হবে। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন থাকলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে, বিশেষ করে হেলমেট না থাকা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় তাঁরাও মামলার আওতায় আসবেন। তবে তাঁদের গাড়ি জব্দ করার ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা দেখানো হবে।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের কাছ থেকে উঠে আসে বিভিন্ন প্রসঙ্গ। তাঁরা সমস্যাগুলো তুলে ধরেন এবং এর সমাধান দাবি করেন। সুন্দরবনে জলদস্যুদের চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে সাধারণ জেলে-বাওয়ালিদের জিম্মি করে রাখা, বেসরকারি সংস্থা লিডারসের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডলকে গ্রেপ্তার-পরবর্তী একটি মহলের অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মিছিল, জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বুশরার জাল বিস্তার এবং তাতে একজন সংসদ সদস্যের বাবার নেতৃত্বদান, কলারোয়ায় চোরাচালানিদের মধ্যে সংঘর্ষ, শহরের মধ্য দিয়ে মোটরসাইকেলে ভারতীয় পণ্য পাচার, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চলাচল বন্ধ না হওয়াসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
পুলিশ সুপার প্রতিটি বিষয়ে তাঁর মতামত দিয়ে বলেন, সংবাদকর্মীরা এসব বিষয় পত্র-পত্রিকায় তুলে আনলে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তার সমাধান আরো সহজ হতে পারে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার সাঈদ, সহকারী পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মেহেদী হাসান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ শেখ, বিশেষ শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক, গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা পুলিশের তথ্য কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেনসহ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা।
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, দৈনিক সাতনদী সম্পাদক হাবিবুর রহমান, দিনকালের আবদুল বারী, সময় টিভির মমতাজ আহমেদ বাপী, এশিয়ান টিভির আবদুস সামাদ, যমুনা টিভির আহসানুর রহমান রাজীব, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মনিরুল ইসলাম মনি প্রমুখ সাংবাদিক। তাঁরা বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
আলোচনায় উঠে আসে সাংবাদিক না হয়েও মোটরসাইকেলে প্রেস লিখে সাংবাদিকতার নামে প্রতারণা, মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্র্যাক ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া-সংক্রান্ত জটিলতা ও শম্ভুকগতির বিষয়, কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাগীর চকে পাঁচ খুন-পরবর্তী অস্থিরতা, আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচন, শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনসহ নানা বিষয়।
পুলিশ সুপার এসব বিষয়ে তাঁর মতামত দেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রতিটি বিষয়ে তিনি মনোযোগ দেবেন এবং তা সমাধানের আশ্বাস দেন।