আওয়ামী লীগের কাছে কিছু প্রস্তাব রেখেছে ইসি : এইচ টি ইমাম
নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে আরো সক্রিয় ও সুন্দর করার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে কিছু প্রস্তাব রেখেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
আজ শুক্রবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন এইচ টি ইমাম। ইসির পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশন তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরো সক্রিয় ও সুন্দর করার জন্য কিছু প্রস্তাব রেখেছে। আমরা সেগুলো সরকারের কাছে পেশ করব।’
কী কী প্রস্তাব রেখেছে এমন প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন মোটামুটিভাবে সবই প্রশাসনিক কাঠামোগত প্রস্তাব দিয়েছে। যেমন- পদোন্নতির কিছু ব্যাপার আছে, নির্বাচন কর্মকর্তারা যারা, তাদের আরো উঁচুস্তরে দেওয়া আরো সুন্দরভাবে দায়িত্ব বণ্টন করা, তাদের চলাচলের জন্য গাড়ি ইত্যাদি। তারপরে প্রাধিকার, সরকারের যেমন হয়, যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে সকল নির্বাচন কমিশনারদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে তাদের জন্য বাড়ি দেওয়া, বিচারকরা যা পেয়ে থাকেন, এগুলো নিয়ে কথা হয়েছে।’
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আমার মনে হয়, করা উচিত সরকারের সমার্থ্যের মধ্যে যতটুকু আছে। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বাজেট আছে। আমি প্রস্তাব দেব, তাদের বাজেটের মধ্যে যদি এগুলো নিজেরা করে নেয়, তাহলে জাতীয় বাজেটে আমরা সমর্থন দিলেই কমিশন এমনিই পেয়ে যাবে। খুঁটিনাটি পরে বলব। আমার মনে হয় এগুলো করা সম্ভব।’
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চ্যালেঞ্জের ব্যাখ্যায় এইচ টি ইমাম বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ যেটা সবচেয়ে বড় একই দিনে তিনশ আসনে নির্বাচন, সাড়ে ১০ কোটি ভোটার, তাদের একত্রে নিয়ে আসা এবং সেখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারা, তার ব্যবস্থা করা, এগুলো অসাধারণ একটি কাজ ছিল। প্রত্যেকটা জায়গায় ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচন উপকরণ যথাসময়ে পৌঁছানো এবং সমন্বয়টা সম্ভব হয়েছে সরকারের নানাভাবে সহায়তার কারণে। আমরা প্রত্যেকে চেষ্টা করেছি, যখন যা দরকার নির্বাচন কমিশন যা বলেছে। আমাদের একই কথা নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য এককভাবে দায়ী, সকল কর্তৃত্ব তাদের সংবিধানে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকার সব সহায়তা করবে।’
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা সহায়তা করেছি। তা না হলে প্রায় সাত লাখ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা, তাদের পাঠানো, এটি একদিকে অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এতগুলো বাহিনী একত্র করে তাদের মধ্যে সমন্বয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হতো না।’ তিনি আরো বলেন, ‘গতকালই আইজি পুলিশ জানিয়েছেন এবারই প্রথম এতগুলো নির্বাচনের মধ্যে একজনও পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য নিহত অথবা আহত হননি। অবাক কাণ্ড প্রতিবছরই নির্বাচনে এদের উপর আক্রমণ হয়। ২০০১ সালে ৫০০, ২০০৭ সালে ১৭০ জন, ২০১৪ সালে ৩০৩ জন, এবারের নির্বাচনের পূর্বে কিছুকিছু ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ। এমনিতেই ঝগড়াঝাটি লেগে থাকে, ব্যক্তিগত রেষারেষি, জমি নিয়ে, নারী ঘটিত, টাকা-পয়সা— এগুলো তো হয়ই। নির্বাচনের দিন কি এগুলো বন্ধ ছিল? এগুলো যোগ করেই হয়তো এ সংখ্যাটা এসেছে।’
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘এবারের সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপারটি হলো যে, পুলিশ বাহিনী কিংবা অন্যান্য কোনো বাহিনীরই কেউ আহত হননি। কারো ওপর কোনো আঘাত আসেনি। নিহত তো দূরের কথা, ২০১৪ সালের ২০ জন পুলিশ নিহত হয়েছে। ২০০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়েছে। আমরা গর্ববোধ করি, নিশ্চয় আপনারাও করবেন। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। আমরা আগের চাইতে অনেক বেশি পরিপক্ব, অনেক ম্যাচিউরড হয়েছি এবং আমাদের প্রশাসনিক, সামরিক এবং আইনশৃঙ্খলার সব দিক থেকে দক্ষতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে সাথে নির্বাচন কমিশনের যে দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে, অসাধারণ। নির্বাচনের দিন, পরের দিন এই যে গেজেট নোটিফিকেশন নিখুঁতভাবে করা, অনেকেই সারারাত ধরে এ কাজকর্মগুলো করেছেন।’
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে পুনর্ভোট চাওয়া বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এটা সংবিধানেরও বিষয়। নতুন করে নির্বাচন করাও সম্ভব নয়। আর সেই তত্ত্ববাধায়ক সরকারের দাবি পুরোনো কথা, এটি আলোচনা করে লাভ নেই। অনেক কিছু তারা বলেছে ভুয়া কথা। তবে যেখানে অনিয়ম হয়েছে এবং তদন্তযোগ্য নির্বাচন কমিশন নিশ্চয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’
এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা অনেক বাড়ল বলেও মন্তব্য করেন এইচ টি ইমাম। তিনি বলেন, ‘আপনারা বিস্মিত হবেন-বিদেশ থেকে যে সব ডেলিগেশন এসেছিল সবাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমেরিকা রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত বলেছেন এবারের মতো দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দল যেভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন, এত সুষ্ঠু এত সুন্দর নির্বাচন হয়নি এবং পৃথিবীব্যাপী যেভাবে এবাবে যে রকম সাথে সাথে স্বীকৃতি পাওয়া গেছে এবং আমাদের নির্বাচন পদ্ধতি নির্বাচন কমিশনের প্রতি যে আস্থা সবাই প্রকাশ করেছে তাতে আমরা গর্বিত।’