ভোট দিতে পারছেন না খালেদা জিয়া
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পর এই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে নিজের ভোট প্রয়োগ করতে পারছেন না তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারেই থাকবেন তিনি। অন্য কারাবন্দিরাও ভোট দিতে পারবেন না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল রোডের ভোটার। বর্তমানে ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি ভবনে বন্দি রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কারাগারে রয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁদের কেউই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী কারাবন্দি থাকায় বিএনপির চেয়ারপারসন ভোট দিতে পারবেন না।’
কারাবন্দিদের ভোট না দিতে পারার কারণ হিসেবে হেলালুদ্দীন বলেন, ‘জেলখানায় সাধারণত তিনশ আসনে বন্দিরা থাকেন। সেখানে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তিনশ আসনে ব্যালট এবং ব্যালট বাক্স পাঠানো সম্ভব নয়। আবার মাঝেমধ্যে কারাবন্দিদের বিভিন্ন জেলখানায় বদলি করা হয়। তা ছাড়া কারাবন্দিরা স্বাভাবিক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের ভোট গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘কারাবন্দিদের জন্য ভোট দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কারাবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো নাগরিক ভোট প্রদানে বাধা নেই। তবে ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে একজন নাগরিক কী প্রক্রিয়ায় ভোট দেবেন, সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো উল্লেখ নেই। আসামিদের জন্য জেলখানায় ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করবেন কি না, অথবা প্যারোলে মুক্তির মাধ্যমে ভোট প্রয়োগ করবেন কি না, এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট কোনো কিছুই নেই। এ কারণে কারাগারে থাকা আসামিরা ভোট দিতে পারছেন না।’
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারছেন না। এটা জাতির জন্য খুবই দুঃখজনক। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, এর প্রতিবাদে প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে একটি করে ধানের শীষে ভোট দেওয়া এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কারাবন্দির সংখ্যা ৮০ হাজারের কাছাকাছি। এসব বন্দির বেশিরভাগই ভোটার। এবারের নির্বাচনে বিএনপির ১৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কারাগারে রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
নাশকতার মামলায় যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে বিএনপির প্রার্থী জামায়াত নেতা আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মাওলানা আবদুল হামিদ, রাজশাহী-৬ আসনে আবু সাঈদ চাঁদ, মাগুরা-১ আসনে মনোয়ার হোসেন, খুলনা-৬ আসনে আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-২ আসনে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, গাজীপুর-৫ আসনে এ কে এম ফজলুল হক মিলন, নরসিংদী-১ আসনে খায়রুল কবীর খোকন, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে এস এম জিলানী, কুমিল্লা-১০ আসনে মনিরুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৪ আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ আসনে ডা. শাহাদাত চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আ ন ম শামসুল ইসলাম, কুষ্টিয়া-১ আসনে রেজা আহমেদ বাচ্চু কারাবন্দি রয়েছেন।