২৪ জন মাদক ব্যবসায়ীর ভালো হওয়ার শপথ
৩০ বিঘা জমির মালিক তিনি। তবু অধিক মুনাফার লোভে পাবনার ঈশ্বরদীর সাড়া ইউনিয়নের মাঝদিয়া পুরাতন রেললাইন পাড়ার শামসুল মণ্ডল (৪৫) মাদক ব্যবসায় যুক্ত হন। গত ১২ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে ১১টি মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। এ মামলাগুলোতে তিনি জামিনে রয়েছেন। কিন্তু অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি এখন অনুতপ্ত।
মাদকের ব্যবসা ভালো কোনো কাজ নয়-এমন উপলব্ধি হয়েছে শামসুল মণ্ডলের। তাই তিনি মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। শুধু শামসুল একা নন, তাঁর মতো ওই মাজদিয়া গ্রামের নিহারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ১৪টি মাদক মামলা রয়েছে। তিনিও ঈশ্বরদীর প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনিও মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান।
শামসুল ও নিহারুলের মতো ঈশ্বরদীর ২৪ জন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী গতকাল শনিবার বিকেলে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। একই সঙ্গে আর কোনোদিন মাদক ব্যবসা করবেন না এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন এমন অঙ্গীকারও করেছেন।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলার সাঁড়ার মাঝদিয়া মাদ্রাসা মাঠে নারীসহ ২৪ মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করার পর পাবনা পুলিশ সুপার তাঁদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় সেখানে কয়েক শ মানুষ উপস্থিত ছিল।
এরপর উপস্থিত জনতার সামনে সহকারী পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) আবু যাহিদ মাদক ব্যবসায়ীদের ‘আর কখনো মাদক ব্যবসা করব না’ বলে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ গ্রহণের পর ওই মাদক ব্যবসায়ীরা তাঁদের অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেন।
এ সময় পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান, ঈশ্বরদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) আবু যাহিদ, ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিমান কুমার দাশ, সাঁড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাবুল আলম সরদার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাশেম আলী, পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ-উল হক রানা বক্তব্য দেন।
বক্তৃতায় পুলিশ সুপার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা দরকার হলে চাঁদা তুলে আপনাদের সন্তান ও পরিবারের বাঁচার ব্যবস্থা করব। কিন্তু আত্মসমর্পণের পর যদি কেউ আবার এ ব্যবসা করেন, তবে আপনার জীবন থাকবে। কিন্তু পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করে বাকি জীবন কাটবে। কারণ আমি ঢাকা থেকে বিদেশিদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি।’
যেভাবে হয় আত্মসমর্পণ : আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীরা বলেন, লোভে পড়ে ও সঙ্গদোষে তাঁরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। মাদকের ব্যবসার কারণে মানুষ তাঁদের কখনো ভালোভাবে দেখত না। প্রশাসনের কাছেও যেতে পারতেন না। আতঙ্কে দিন কাটাতে হতো। এরপর তাঁরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরিকল্পনা করেন। আর আত্মসমর্পণের ব্যাপারে মাজদিয়া গ্রামের প্রধান মাদক ব্যবসায়ী শামসুল মণ্ডল জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শামসুল বলেন, ‘আমরা লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আর কখনো মাদক ব্যবসা করব না।’ মাদক ব্যবসায়ীদের পৃথক একটি করে লিখিত অঙ্গীকারনামা সংগ্রহ করে পুলিশ। এরপর শনিবার আত্মসমর্পণ করেন তাঁরা।
ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মাদক মামলার আসামি খায়রুল ইসলাম, নেহারুল, মক্তব আলী, জাহিদুল ইসলাম, মামুন, বাচ্চু সরদার, ফয়েজ আহমেদ, সোহেল রানা, নুরু মিয়া, সাইফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম রাজু, ফাহিমা খাতুন, আলাউদ্দিন আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর, বাবর আলী, সামসুদ্দিনসহ ২২ মাদক ব্যবসায়ী শপথ নেন।