বাজিতপুরে ‘গুলির শব্দে’ বিএনপিনেতার মৃত্যু
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পুলিশের ফাঁকা গুলির শব্দ শুনে শহীদুল ইসলাম শহীদ (৫৮) নামের এক বিএনপিনেতার মৃত্যু হয়েছে।
বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার সরারচরে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালের বাড়ির কাছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ঘটনাস্থল ও আশপাশে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তবে গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল জানান, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর বাড়ির চারপাশে দুই শতাধিক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে এবং সেখানে থাকা বিএনপি কর্মীদের পিটুনি দেয়। তার বাড়ি ঘিরে পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ব্যাপক গুলিবর্ষণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও উপজেলা ইটখলা মালিক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম শহীদ (৫৮) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল আরো বলেন, আমাকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দিতেই পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। গুলিবর্ষণের সময় শহীদুল ইসলাম সরারচর পুরানবাজারে নিজের দোকানে বসা ছিলেন। গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে তিনি নিচে পড়ে যান। তাঁকে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আফজাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
দুপুরে প্রাণহানির শঙ্কা করেছিলেন ইকবাল
নিজের প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করে নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়নের প্রতিবাদে আজ দুপুরে বাজিতপুরের সরারচর গ্রামের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন বিএনপি প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল অভিযোগ করেন, তাঁকে হত্যা করার জন্য আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ অবস্থায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
ইকবাল বলেন, বর্তমান বিভীষিকাময় পরিস্থিতি ১৯৭১ সালকেও হার মানিয়েছে। বিএনপির সমর্থক হওয়ায় তাঁর নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও মারধরসহ ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। নির্বিচারে গণগ্রেপ্তারের কারণে কোনো পুরুষ বাড়িতে থাকতে পারছে না। সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা যেখানেই তাঁর কর্মী-সমর্থকদের পাচ্ছে, সেখানেই মারধর করে আহত করে পুলিশে সোপর্দ করছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের সহায়তা করছে।
বিএনপির প্রার্থী বলেন, এ পর্যন্ত সাতটি মিথ্যা মামলায় বিএনপির অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক এবং দুই হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না যেতে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের স্বার্থে আটক সব নেতাকর্মীর মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সব দমন-পীড়ন বন্ধ করার দাবি জানান ইকবাল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ঝারুইতলা ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী, কৈলাগ ইউনিয়নের মো. সাইফুল ইসলাম, পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম তাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও শারীরিক নির্যাতন এবং বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের বিবরণ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।