১২২টি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দেশের ৬৪ জেলায় দায়িত্ব পালন করবে ১২২টি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’। নির্বাচনকালীন অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এসব কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (আইন) মো. শরীফ হোসেন হায়দার এ তথ্য জানান।
মো. শরীফ হোসেন হায়দার জানান, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন জজ এবং একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ বা সহকারী জজকে নিয়ে মোট দুজন বিচারক এই কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সারা দেশে তিনশ নির্বাচনী এলাকায় অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এসব কমিটি করা হয়েছে। আয়তন ও ভোটার বিবেচনায় নিয়ে একই জেলায় একাধিক কমিটিও করা হয়েছে। যেমন পঞ্চগড় জেলায় একটি, আবার দিনাজপুর জেলায় কাজ করবে পৃথক তিনটি কমিটি।
উপসচিব বলেন, ‘আজ (গতকাল মঙ্গলবার) রাতে সব কমিটিকে ইসি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে মোট ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটির ২৪৪ জন সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাজ শুরু করবে।’
গত ২৫ নভেম্বর মো. শরীফ হোসেন হায়দার স্বাক্ষরিত একটি সরকারি আদেশ জারি করা হয়। মূলত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিওর কয়েকটি নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী নির্বাচনের আগে-পরে প্রার্থীদের যেকোনো অনিয়ম, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করবেন কমিটির সদস্যরা। মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই নির্বাচনী তদন্ত কমিটির তথ্যসংবলিত গেজেটটি বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় থেকে ছাপা হওয়ার কথা।
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আইন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তা চাইলে কিংবা কমিশন চাইলে নিয়ম লঙ্ঘনের তদন্ত করবেন কমিটির সদস্যরা। কমিশনে প্রতিবেদন পাঠালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিটির সদস্যরা স্বপ্রণোদিত হয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে তদন্ত করবেন। এরপর তদন্ত রিপোর্ট কমিশনে জমা দেবেন। তারপর কমিশন ব্যবস্থা নেবে।
তবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা যদি দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বলতা দেখান, তাহলে কমিশন কী ব্যবস্থা নেবে এমন প্রশ্নের এই কমিশনার কোনো মন্তব্য করেননি।
জানা গেছে, নির্বাচনের আগের দিন থেকে সারা দেশে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারিক হাকিমরা। সারা দেশের ৬৪০ জন বিচারিক হাকিমকে নিয়েও নির্বাচনী আচরণবিধিমালা সংক্রান্ত ব্রিফিং করা হবে। আগামী ৬-৭ ডিসেম্বর এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে।
কমিশন সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সংসদীয় আসনগুলোর বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত কিংবা সুনির্দিষ্ট অনিয়ম অভিযোগের তদন্ত করবে এসব কমিটি। কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক, তাঁর সঙ্গে কাজ করবেন জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ বা সহকারী জজ পদের আরেকজন বিচারক। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যেকোনো প্রার্থী কিংবা রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিক কমিটির সদস্যদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ যেকোনো ধরনের অনিয়মের বিষয়ে তাঁরা দেওয়ানি আদালতের মতো শুনানি করতে পারবেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয় আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানির জন্য হাজির হতে বলবে তদন্ত কমিটি। নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারের মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠলে আমলে নিতে পারবে এসব কমিটি।
অভিযোগ ছাড়াও আইন অনুযায়ী স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ আমলে নিতে পারবেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। মূলত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিমদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের এখতিয়ারের বাইরের অনিয়ম, আচরণবিধি লঙ্ঘন, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের তদন্ত করবেন বিচাররকরা। তদন্ত শেষে কমিটির প্রধান জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা অথবা প্রয়োজনে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবেন।