খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন : ফখরুল
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা কী চায় বা কী বলে, তাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আমাদের কিছু আসে-যায় না। আমরা এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়া নির্বাচনের যোগ্য এবং নিঃসন্দেহে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশের মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য যে আন্দোলন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট শুরু করেছে, সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাস করি। আর সেই জন্য একটা অসমতল নির্বাচনী মাঠে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী, তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা গতকাল রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষ করেছি। আজ বরিশাল বিভাগের ১৮৩ জনের সাক্ষাৎকার শেষ করেছি। এখন খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচনে এখনো যে প্রতিকূলতা রয়েছে, এটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের যেসব দাবি, সরকার তার কোনোটাই গ্রহণ করেনি। এমনকি যে কথা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তাও রাখেননি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রায় দেখছি আমাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, জেলে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যারা সম্ভাব্য প্রার্থী, তাদের মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা এসব বিষয় নির্বাচন কমিশনের গোচরে দিয়েছি, সরকারের গোচরে দিয়েছি। কিন্তু এসব বিষয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যা চলছে, তাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আমি মনে করি না। তাই আমরা আবারও আহ্বান করবো অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’
প্রার্থিতা নিয়ে কোন্দল আছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রার্থিতা নিয়ে কোনো কোন্দল নেই। যাকে দল সমর্থন দেবে, তার পক্ষে সবাই কাজ করবে। কারণ, এটা আমাদের চূড়ান্ত আন্দোলনের অংশ। তাই আমাদের একক প্রার্থী এবার ভোটে অংশ নেবে। কারণ, এ নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ।’
প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যারা দলের প্রতি, দেশের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি অনুগত্য থাকবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে দল তাদের মনোনয়ন দেবে। আমাদের বেশির ভাগ প্রার্থী এ বিষয়ে একমত।’
এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আবেদনে তিনি জামিনও চেয়েছেন। এতে করে নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী।
খালেদা জিয়ার এ মামলার প্যানেল আইনজীবী আমিনুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপিল করায় নিম্ন আদালতের রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত হয়ে গেছে। এখন এ মামলার কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা নেই।’
এর আগে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি জমা দেন তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আবেদনটি ৭০০ পৃষ্ঠারও বেশি বলে জানান এই আইনজীবী।
গত ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার অপর তিন আসামিকেও একই দণ্ডাদেশ দেন আদালত।
তার আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিলেন আদালত। পরে গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট এ মামলায় সাজা বৃদ্ধি করে ১০ বছর করেন।