সরকারের নির্দেশে বিনা উসকানিতে আক্রমণ : রিজভী
সরকারের নির্দেশে বিনা উসকানিতে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পর আজ বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রাণের মেলায় আঘাত করে তারা অশান্তি সৃষ্টি করল। আমাদের নানাভাবে উসকানি দিয়ে তারা শান্তি নষ্ট করতে চায়। তারপরও আমরা বিশৃঙ্খলা করব না। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্র রক্ষা আর খালেদা জিয়ার মুক্তি।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শান্তির পক্ষে, আমরা স্বস্তির পক্ষে, আমরা ন্যায়ের পক্ষে। আমরা কোনো অন্যায় করতে পারি না। তাই নেতাকর্মীদের আমি বলব, আপনার রাস্তায় মিছিল করবেন না, কোনো স্লোগান দেবেন না, রাস্তায় গাড়ি চলবে, আপনারা ফুটপাতে দাঁড়াবেন।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মনোনয়ন ফরম কিনতে গত তিন দিন বিএনপির কার্যালয়ে আসছে। এর মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু আজ কী কারণ ছিল, পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের বিনা কারণে রক্ত ঝরিয়েছে। তারা আজ কাতরাচ্ছে, আর্তনাদ করছে।’
এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘আপনারা কারো নির্দেশে কাজ করবেন না। আপনারা এ দেশের কারো না কারো ভাই, কারো সন্তান। আমাদেরই আত্মীয় আপনারা। তাই কারো স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যায় এমন কাজ করবেন না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপনাদের শান্ত হতে বলেছেন। আপনারা রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে বসে পড়ুন। এটা তারেক রহমানের নির্দেশ। সরকারের কোনো উসকানিতে পা দেবেন না। আপনারা শান্ত হোন।’
অন্যদিকে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘পল্টনের ঘটনা সরকারের পরিকল্পিত। সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে।’
আজ দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। পুলিশের গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নেতাকর্মীদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। দুপুর ১টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। পুরো নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। নেতাকর্মীরা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বর্তমানে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে। মাঝেমধ্যে তারা স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পুলিশ জোনাকি সিনেমা হলের সামনে ও দৈনিক বাংলা মোড়ে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষের কারণে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় যান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। ঝাড়ু হাতে নিয়ে মিছিল করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সংঘর্ষের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই তারা পিকেটিং করেছে, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ আহত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ধৈর্য ধরে সামাল দেওয়ার। তবে আমরা এখন পর্যন্ত অ্যাকশনে যাইনি। এটা পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। পুলিশের দুটি গাড়ি পোড়ানো ছাড়াও সাঁজোয়া যানে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর চেষ্টা করেছি। এরপর যে নির্দেশনা আসবে, সে অনুযায়ীই কাজ করা হবে।’