দাবি না মানলে আপসহীন আন্দোলনের ঘোষণা
সংলাপে দাবি না মানলে আগামী ৮ নভেম্বর রাজশাহী অভিমুখে লংমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আর তফসিল না পেছালে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি পালন করবে জোটটি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা থেকে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দাবি না মানলে আপসহীন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন জোট নেতারা।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা। রাজধানীতে এটাই ঐক্যফ্রন্টের প্রথম জনসভা।
জনসভায় যোগ দিতে আজ সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে বিএনপি ও তার নতুন জোটের নেতাকর্মীদের মিছিলের স্রোত শুরু হয়। শুধু ঢাকা মহানগরই নয়, আশপাশের সব জেলা থেকে নেতাকর্মী আর সমর্থকরা যোগ দেন জনভায়। শোডাউন ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও। তাদের উপস্থিতিতে জনসভাস্থল ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে জনসমাগম।
জনসভার প্রধান অতিথি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন হোসেন অভিযোগ করেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গ্রহণযোগ্য আরেকটি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেনি সরকার। তাঁর অভিযোগ সরকারি দল আইনের ঊর্ধ্বে, আর হয়রানি-নির্যাতন করা হচ্ছে বিরোধী নেতাকর্মীদের।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রত্যেকদিনই বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে হয়রানির শিকার হতে হয়। জেলে নিয়ে যায়। এটা বন্ধ হতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে এটা চলতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়ার মুক্তি দাবি করি এবং অন্য যারা আছেন রাজবন্দি তাদের মুক্তি দাবি করি।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘গণতন্ত্র থাকবে দেশে। দেশে বিরোধী দলের নেত্রীকে শ্রদ্ধা জানানো যাবে না, সে দেশে গণতন্ত্র চলতে পারে না। আমাদের ভোটাধিকার রক্ষা করার জন্য একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এখান থেকে আমরা শপথ নিয়ে যাই, আপসহীনভাবে এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
প্রথম দফা সংলাপে মামলা ও গ্রেপ্তার হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সরকার তা রাখেনি বলে অভিযোগ করেন জনসভার সভাপতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দ্বিতীয় দফা সংলাপে তাদের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা সংলাপে বিশ্বাস করি। শান্তিতে বিশ্বাস করি। সমঝোতায় বিশ্বাস করি। আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই জনগণের সমস্যার সমাধান হোক। জনগণ মুক্তি পাক। এখানে নাটক করলে চলবে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যদি আগামীকাল সংলাপে আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো মেনে না নেয় তাহলে ৮ নভেম্বর রাজশাহীতে আমরা যাত্রা করব রোড মার্চ করে। রাজশাহী ৯ নভেম্বর জনসভা হবে। খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহে জনসভা হবে। নির্বাচন কমিশন যদি তফসিল না পেছায় তাহলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা হবে।’
২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেন, সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।
জনসভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই সভা থেকে, এই মঞ্চ থেকে বাইরে শাপলা চত্বর পর্যন্ত যত মানুষ আছে রাজপথ প্রকম্পিত করে আন্দোলন করে আমাদের দাবি আমরা আদায় করব।’
প্রধান বক্তা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘এ লড়াই মুক্তির লড়াই। এ লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই। আমরা দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুনে রাখেন কোনো ছল-চাতুরিতে কাজ হবে না। ৭ দফা মানতে হবে। জেগেছে জনতা, ওদেরকে থামিয়ে রাখতে পারবেন না।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া জেলখানায় গিয়ে গণতন্ত্রের প্রতীক হয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া জেলখানায় বন্দি থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের অন্তরে জায়গা নিয়েছেন।’
জনসভায় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও বক্তব্য দেন ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন নেতা।