নারায়ণগঞ্জে চার লাশ : দুজনকে তুলে নিয়ে হত্যার দাবি
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় গুলিবিদ্ধ চার লাশের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুজনের পরিবার অভিযোগ করেছে যে, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিচয়ে তাদের আগেই তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং পরে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়।
লাশ পাওয়ার একদিন পর আজ সোমবার সকালে পাবনা জেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের ধর্মগ্রাম এলাকার মো. সবুজ সরদার (১৭) এবং একই গ্রামের ফারুক হোসেনের (৪০) লাশ শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। এর আগে গতকাল রোববার রাজধানীর রামপুরা এলাকার লুৎফর মোল্লা নামে আরো একজনের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল।
আজ রোববার সকালে আড়াইহাজার উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের পাঁচরুখী ইউনিয়নের দুটি স্থান থেকে চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান আরো বলেন, ‘রাতে কে বা কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা জানা যায়নি। ভোরে এলাকাবাসী খবর দিলে পাঁচরুখী এলাকার দুটি স্থান থেকে চার যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ সকালে নারায়ণগঞ্জ এসে লাশ শনাক্তের পর সবুজের বাবা মো. খায়রুল সরদার জানান, সবুজ তাঁর বড় ছেলে। সবুজের স্ত্রী ও জিসান নামের সাত মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তিনি গ্রামের বাড়িতে বেকারির কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। অভাবের তাড়নায় পরিবারের ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য বাড়তি আয়ের জন্যই গত সোমবার ঢাকায় এসেছিলেন সবুজ। এর পরের দিন থেকেই সবুজের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
খায়রুল সরদার এনটিভি অনলাইনকে আরো বলেন, ‘আমাক কইছে, চাইরডা লাশ আছে। আমার ছেলেডাও আছে। আমার ছেলে আছে। তারপর ওই যে সবুজের বউ-ছেলেপেলে আছে। আমার ছেলে সবুজ সোমবারে বাড়িত থেকে ঢাকা আইছে। উনি নাইটে আইছে, আমি সকালে আইছি। ঢাকা আইসে চরে আইসে, গাড়ি চালাইছি। গাড়ি চালাই আমার মনডা ভালো লাগে নাই, আমি বাড়িত ফোন দিছি। ফোন দিছি, আমাক ফোনে কয় নাই যে, তোমার ছেলে এরম হয়েছে। আমাক একজন ফোন দিয়ে বলিছে, ভাই আপনি ইমারজেন্সি বাড়িত চলি আসেন। আমি বাড়িত আইসা দেখতেছি কি, শুনতেছি, আমার ছেলে ধরা পড়েছে। ছেলে যে মারা গেছে এইটা কয়নি। আমি বাসায় গেছি, এলাকার লোকজন কয় যে, তোমার ছেলেক ডিবি ধরে নিয়ে গেছে। আমার ছেলে ঢাকায় কাজ করতে আয়েছে। এহন মাইরলো কিডা, ধইরলো কিডা, এডা তো আমি দেহি নাই। আইছিল আইজ বিশ-বাইশ দিন হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জে আড়াইহাজারে নিহত ফারুক হোসেনের বাবা জামাল উদ্দিন। ছবি : এনটিভি
‘কোনো রাজনীতি করত না। আমার ছেলেক আমি বইল্লাম, আমাক বলল যে, আমি ঢাকায় যাইতেছি কাজ করতে। আমার ছেলের ভাগ্য, কপাল ছিল এডা। কপালে যেডা থাকে সেডাই। ইন্টারনেটে বলে দিছিল, এই খবর পাইয়াই আইছি’, যোগ করেন সবুজের বাবা।
একই দাবি করেন নিহত ফারুক হোসেনের বাবা জামাল উদ্দিনও। তাদের গ্রাম থেকে একসঙ্গে চারজন এসেছিল বলে তিনি জানান। এ দুজন ছাড়া লিটন ও জহিরুল নামে আর দুজন এখনো নিখোঁজ বলেও তিনি জানান।
জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ছেলেক তো পাইলাম। এখন দুইজন নিখোঁজ। একই দিন থেকে। চারজন যে একই সাথে ছিল। একই দিন ধরা পড়ছে। একই দিন মারছে, দুটি পাইছি, আর দুটি পাইছি না। পরে আবার ওখান থেকে রাতে নিয়েও আসে ডিবি পুলিশে। এখন মারিছে ডিবি পুলিশেই। বুঝলেন? আমার ছেলে গাড়ি চালায়। গাউছিয়া থেকে গুলিস্তান টিপ মারত। বুঝলেন? বাস চালাত। খালি আইজ না, ধরেন যে ১৫ বছর হইল এখানে আছি। ১৫ বছর ধইরা কোনো লোকের লগে কোনো কৈফিয়ত নাই, আমার ছেলের। বুঝলেন? ধরা পড়ার পরে হাজার লোক আমাক ফোন করেছে। হ্যাঁ, আমি চিনতে পারছি। আমার ছেলেক আমি চিনতে পারছি।’
এদিকে এ ঘটনায় আড়াইহাজার থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা ও অস্ত্র আইনে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করেছে।