জোট নিয়ে ভয় নেই, এত মায়াকান্না কেন?
দেশে জাতীয় ঐক্য হওয়ায় খুশি হয়েছেন বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘জোট নিয়ে আমার কোনো ভয় নেই। ভয় তাদের, যাদের হারানোর কিছু থাকে। আমার তো হারানোর কিছু নেই।’
আজ বুধবার বিকেলে সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
জাতীয় ঐক্য নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জোট হচ্ছে আমি খুশি। তাদের জোট সম্প্রসারিত করার জন্য যা যা লাগে আমি সব করতে রাজি। আর জোট হচ্ছে বড় বড় মানুষ নিয়ে। সেখানে কোনো ছোট ছোট মানুষ নেই। এটি নির্বাচনের জন্য ভালো। কিন্তু তাঁরা কেউ নির্বাচনে আসবে কিনা, বা কাজ করবে কিনা সেটি নিয়ে কিছু সন্দেহ আছে। আমি জোট গঠনকে সাধুবাদ জানাব। তাঁরা সভা সমাবেশ করতে চায় এটা আমরা অনুমতি দিয়েছি। এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেদিন বিএনপি মিটিং করেছে। সেখানে কেউ বললো ৫০, কেউ বললো ৬০ হাজার লোক হয়েছে। আর আমি বলি এক লাখ। তাও ভালো সেটি তাঁরা করতে পারে।’
গণতন্ত্র ফিরে এসেছে এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ অনেক কষ্ট করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি, গণতন্ত্র-উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক। সেটি জনগণই চায়। আর নৌকায় ভোট দিলেই একমাত্র দেশের উন্নয়ন হবে, এ ছাড়া আর কেউ দেশের উন্নয়নের দিকে নজর দিবে না।’
উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে দুই দফা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি চেয়েছি যদি একটানা দুইবার থাকতে পারি, তাহলে দেশের জনগণের জন্য উন্নয়নটা দৃশ্যমান হবে। সেটি করতে পেরেছি। এখন আমার কোনো ভয় নেই। কারণ ৯৬ থেকে ২০০১ সালের যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত এসে সেটি নষ্ট করেছে। তাই চেয়েছি যেন দুই দফা একটানা ক্ষমতায় থাকতে পারি।’
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন অবশ্যই হবে, কারণ বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন চায়। বাংলাদেশে এত দল, কোন দল আসবে কোন দল আসবে না সেটি তাদের দলীয় বিষয়। এটি নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমরা আশা করি সব দল এবার নির্বাচনে আসবে, যদি কেউ না আসে সেটি তাদের একান্ত বিষয়।’
নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে অংশগ্রহণের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা কাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, যারা মানুষকে মানুষ মনে করে না, আগুনে পুড়িয়ে মারে। তাদের জন্য কেন এত মায়াকান্না আপনাদের। দেশের মানুষকে তাদের বিষয়ে জানতে হবে। আপনারা তো সাংবাদিক। কয়জন আগুনে পোড়া মানুষজনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন? খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেন তারা কিভাবে বেঁচে আছে, কিভাবে তাদের জীবন চলছে, কিভাবে তাদের পরিবার চলছে। যারা এ ধরনের নোংরা জঘন্য কাজ করতে পারে, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি, এত উদ্বেগ কেন আমার বুঝে আসেনা। যারা সামান্য এতিমের টাকার লোভ সামলাতে পারে না তাদের জন্যই আপনাদের এত উদ্বেগ, কান্না!’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দলটি মানুষ পোড়ানোর খেলা খেললো, তাদের জন্য এত মায়া কেন, এত উদ্বেগ কেন? তাদের কাজতো এতিমের টাকা মেরে খাওয়া, দেশের টাকা পাচার, দুর্নীতি। খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য অনেকে বসে আছে। তাহলে সেই বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য এত চিন্তা কেন, এত মায়াকান্না কেন?
জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান এবং সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে আজ বিকেল ৪টার দিকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। সপ্তাহব্যাপী সেখানে অবস্থান করে ১ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণে চলমান রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তির বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেন। পাশাপাশি নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এজেন্সির প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এসব আলোচনায় অন্যতম বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সংকট।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্টারপ্রেস সার্ভিসেস নিউজ এজেন্সির ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে দূরদর্শী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের ২০১৮ সালের ‘আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আজকের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সেই সব বিষয় তুলে ধরেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়।