জনসভায় এলো ৮ দফা, তফসিলের আগেই পূরণের দাবি
বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া আমাদের বলেছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ দানব সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। কারণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নেই।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বিএনপির জনসভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জনসভায় দলের পক্ষে আট দফা দাবি ও ১২ দফা লক্ষ্য তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। ওই দাবিগুলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। আর ক্ষমতায় গেলে ১২টি লক্ষ্য পূরণ করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
দাবি আদায়ে আগামী ৩ অক্টোবর সারা দেশের জেলায় জেলায় সমাবেশ করা হবে ও জেলা প্রশাসকদের স্মারকলিপি দেওয়া হবে। ৪ অক্টোবর দেশের মহানগরগুলোতে সমাবেশ ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি শুরু করতে চাই। কারণ এ সরকার আমাদের দেশ, জাতি, সমাজ ও গণতন্ত্রকে শেষ করে দিয়েছে। তাই এ সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব। আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করতে হবে।
সরকার ও পুলিশের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, একবার চিন্তা করেছেন যেভাবে মামলা দিচ্ছেন তদন্ত হলে তখন কি জবাব দিবেন? সব কিছুর জবাব দিতে হবে। এ সরকারের নিস্তার নেই, তাদের সব অপশাসনের জবাব দিতে হবে। আসলে সরকার ভয় পেয়েছে। আর সে জন্য মামলা দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগ রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বলে বলে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। তাই ভয়ের কারণে বলে সবকিছুতে বিএনপির ষড়যন্ত্র করে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়া আমাদের সামনে নেই। কিন্তু তাঁর খালি চেয়ার আমাদের সামনে আছে। খালেদা জিয়া আমাদের চোখের সামনে না থাকলেও তিনি আমাদের হৃদয়ের মাঝে আছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ভোটের সময় সেনা মোতায়েনসহ বিভিন্ন দাবিতে আজকের জনসভা হয়। দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চলে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। জনসভায় প্রধান অতিথি করা হয় কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। এজন্য তাঁর জন্য একটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়।
‘ঢাকা শহর জনসমুদ্র হয়ে যাবে’
জনসভার প্রধান বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমি সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে মিটিং করতে দিয়েছেন। এ সভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। সাহস থাকলে সাতদিনের সময় দিয়ে সভা করার সুযোগ দিন, দেখবেন ঢাকা শহর জনসমুদ্র হয়ে যাবে। আপনারা বলেন, আমরা সভা করলে নাশকতা হবে। আজ দেখে যান, আমাদের সভা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ। কোথাও আপনারা বিশৃঙ্খলা দেখতে পান?
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার রাষ্ট্রের সব স্তম্ভকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ সরকার ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে। তাই এ দেশের মানুষ স্বৈরাচার সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাদের বিদায় নিতে হবে। জনগণের প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়া একটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। আজ সারা দেশের জনগণ খালেদা জিয়ার দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ঐক্য গঠন করেছে। এখন খালেদা জিয়ার দাবির সঙ্গে এক হয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য। খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ এখন আতঙ্কিত। তাই তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এজন্য উল্টা-পাল্টা কথা বলে। আমাদের সামনে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
প্রশাসনের উদ্দেশে ড. মোশাররফ বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগের কর্মচারী নন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাই আওয়ামী লীগের কথা শুনবেন না। জনগণের পাশে দাঁড়ান, না হলে আপনাদেরও কাঁঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। জনগণের ওপর নির্যাতন করবেন না। জনগণের পক্ষে অবস্থান নিন।
‘সাতদিনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করব’
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, সরকার ততই চেষ্টা করছে পরিবেশ নষ্ট করতে। কারণ তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের পরাজয় হবে। তাই তারা ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
মওদুদ আহমদ বলেন, এবার আর সরকারকে মাঠ দখল করতে দেওয়া হবে না। বিনা বাধায় ছেড়ে দেওয়া হবে না। আবার একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় দখল করতে দেওয়া হবে না। আপনারা যদি মনে করেন আপনারা মাঠ দখল করবেন, আর আমরা বসে থাকব, সেটি হবে দুঃস্বপ্ন।
মওদুদ বলেন, নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার জবাব এ সরকারকে দিতে হবে। আপনাদের সব অপরাধের জবাব দিতে হবে। মনে রাখবেন আপনাদের পতনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। যতই চেষ্টা করেন আর ক্ষমতা দখল করে থাকতে দেবে না জনগণ।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি জঘন্য আইন। এর ধারাগুলো সংবিধান পরিপন্থী। সাংবাদিকদের বলব, আপনারা সরকারকে বাধ্য করেন এ আইন বাতিল করতে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে নির্বাচনের আগে যাতে সরকারের অপকর্মের সংবাদ প্রচার করতে না পারে সেই জন্য। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাতদিনের মধ্যে বাতিল করব।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা আইনি মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্তির অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকার বিচার বিভাগকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করছে। তাই তার মুক্তির একমাত্র পথ হলো রাজপথ। আমাদের সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। সামনে আমাদের সময় আসছে।
‘সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব’
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। কারণ সরকার একের পর এক মামলা দিচ্ছে খালেদা জিয়া যেন বের হয়ে আসতে না পারেন।
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের সবাইকে রাজপথের আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ রাজপথ ছাড়া দাবি আদায় হবে না, খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় হবে না।
জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের সংগ্রাম চলছে-চলবে, যত দিন না খালেদা জিয়ার মুক্তি হয়, তারেক রহমান দেশে ফিরে না আসেন, তত দিন আমদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। সরকারকে এবার বিনা বাধায় পার হয়ে যেতে দেওয়া হবে না। সবাইকে সাথে নিয়ে সরকারের পতন নিশ্চিত করব।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, আপনারা প্রস্তুত থাকুন, রাস্তায় থাকুন। খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন।
‘আওয়ামী লীগই ষড়যন্ত্র করছে ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এ দেশে কেউ বাকি নাই, যাদের বিরুদ্ধে মামলা নাই। সরকার গত এক মাস বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিচ্ছে। বাংলাদেশে মনে হয় কখনো কারো বিরুদ্ধে এত অমানসিক নির্যাতন হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এ সরকার বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে ভয় পায়। তাই সবার নামে গায়েবি মামলা দিচ্ছে।
সরকারের উদ্দেশে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারের নেতারা বলেন, তারা রাজপথ দখল করবেন। তারা রাজপথ দখল করবে কীভাবে, গোটা বাংলাদেশই তারা দখল করে আছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই ষড়যন্ত্র করছে ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য। কিন্তু আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করব।
‘সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হবে না’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জনসভায় বলেন, আমরা অনেক দাবি করি। কিন্তু কার কাছে দাবি করি? যার কাছে দাবি করি তিনি কি আমাদের নেতাকর্মীদের ধরছেন ছাড়ার জন্য? তাহলে আমরা কি তাঁর কাছে মুক্তি চাই খালেদা জিয়ার?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হবে না। এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। কারণ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতা দখল করতে চাইবে। কিন্তু বাংলাদেশে আর সেটি হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এখন আর সরকারের সময় নাই৷ তাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগের এখন কবরস্থান দখল করা ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই। তারা সব দখল করেছে।
গয়েশ্বর বলেন, আজ দেশে একটি ঐক্য তৈরি হয়েছে। জাতীয় ঐক্যের শক্তি খালেদা জিয়ার মুক্তি। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যারা রাজপথে আসবেন, তারা বিএনপির বন্ধু। আমরা তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করব।
‘বক্তব্য দেওয়ার কিছু নাই’
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রেখেছে। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করে আনব। তাই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
মঈন খান বলেন, বক্তব্য দেওয়ার কিছু নাই৷ আমাদের এখন কাজের সময়, তাই সবাইকে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ আবার বাকশাল কায়েমের জন্য মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে।
‘রাজপথ দখল করতে হবে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামী দিনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হলে আমাদের রাজপথ দখল করতে হবে। তা নাহলে আমাদের কোনো দাবি আদায় হবে না, খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবে না। রাজপথ দখল হলেই খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, রাজপথ দখল করতে হবে। তাহলেই আমাদের দাবি আদায় হবে। না হলে কেউ আমাদের পাশে থাকবে না।
ভাইস চেয়ারম্যানরা কী বললেন
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আজ জাতির সামনে দুটি প্রশ্ন, তা হলো একটি নির্বাচন, আরেকটি হলো আন্দোলন। নির্বাচন করতে হয় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায়। আর আন্দোলন করতে হয় দাবি আদায়ের জন্য। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্রের শিকার। তাই আন্দোলন করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ আন্দোলন ছাড়া কোনো স্বৈরশাসক বিদায় হয়নি। কারণ তারা জনগণকে চেপে ধরে ক্ষমতায় থাকতে চায়।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের সবাইকে এ সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যদি আমরা রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি তাহলে আওয়ামী লীগ সরকার ভেসে যাবে। তাই আসুন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন, স্বৈরশাসককে বিদায় করুন।
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সবাইকে রাজপথের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে শেখ হাসিনা যে পথ দিয়ে নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে নিয়ে গেছেন তাঁকেও একই রাস্তায় সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। সব অন্যায়ের জবাব তাঁকে দিতেই হবে।
মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শুধু বিএনপি নয় দেশের সব পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তাই সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি না দিলে যুদ্ধ করতে হবে, যে যুদ্ধ করেছি ১৯৭১ সালে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের কথা একটি। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আজ এ সভায় দাঁড়িয়ে আমি এই স্বৈরাচার সরকারের পতন দেখতে পাচ্ছি। আজ সময় এসেছে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণবিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। আর এ গণবিফোরণে হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত হবে।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আজ আমাদের শপথ নিতে হবে, সবাইকে রাজপথের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমরা শপথ নিলাম, এই স্বৈরাচারী সরকারের হাতে এভাবে দেশ চলতে দিব না, দিতে পারি না। তাই আগামীকাল থেকে আমাদের যে কর্মসূচি ঘোষণা হবে তা বাস্তবায়নে রাজপথে থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম বলেছেন, ১ তারিখ থেকে গোটা বাংলাদেশ দখল করবেন। কিন্তু আপনার নেতা যেদিন মারা গেছেন সে দিন আপনি কি জানাজা পড়েছিলেন? কবরে এক মুঠো মাটি দিয়েছিলেন?
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে দুদু বলেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের। বিএনপি নির্বাচনে যাবে, তার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবে আর বিএনপি নির্বাচনে যাবে এমন হবে না। অবশ্যই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
জয়নুল আবদীন বলেন, আজ যে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা হবে সে আন্দোলনের মাধ্যমে ও আইনি লড়াইয়ে খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে আসবেন। তাই সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। বিএনপি নির্বাচনমুখী দল, তাই ভোটকে ভয় পায় না।
নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, আজ দেশের ক্ষমতায় জাতিবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি। এ শক্তির পতন অনিবার্য। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, রাজপথে আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ বলেন, আর বেশি দিন বাকি নাই শেখ হাসিনার পতনের। শেখ হাসিনার পতন হবে এটা দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায় সবাই বিশ্বাস করে। আমরা শুধু একটু ধাক্কা দেব। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনাকে মসনদ থেকে সরিয়ে দেব।
গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ বিএনপিকে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার জন্য ২২ শর্তে অনুমতি দেয়। এরপরই চলে সভা সফল করতে বিএনপির প্রস্তুতি।
এর আগে আজকের এই জনসভার তারিখ বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করে বিএনপি। প্রথমে ২৭, পরে ২৯, এরপর আজ ৩০ সেপ্টেম্বর জনসভা করে দলটি।
জনসভার ঘোষণা দেওয়ার পর দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার আশপাশের নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মূলত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকায় বড় সভা করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা ও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বিএনপির আজকের এই জনসভা। সেই জন্য ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে দলের নেতাকর্মীদের সভায় অংশ নিতে নির্দেশ দেয় হাইকমান্ড।
আজকের এই জনসভা দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা সভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসভাস্থলে আসতে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাঁরা মৎস্য ভবন, রমনা পার্ক ও শাহবাগ থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে প্রবেশ করেন। এ সময় গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসার ফলে মৎস্য ভবন, শাহবাগ, কদম ফোয়ারা এলাকা হয়ে ওঠে মিছিলের নগরী। এসব মিছিলের মিলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যেখানে আজ দীর্ঘদিন পর জনসভা করে বিএনপি।
এসব ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে নানা স্লোগান দেন। তাদের কণ্ঠে ছিল, ‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব’, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি থাকতে দিব না’; ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ এবং ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি, আন্দোলনের শক্তি’।
এদিকে জনসভা ঘিরে সব ধরনের নাশকতা ও হট্টগোল ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে ছিল পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া ছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় পুলিশের সাঁজোয়া যান।