দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে না
দলীয় সরকারের অধীনে নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। সরকারের প্রভাবে কর্মকর্তারা পুরোপুরি স্বাধীন থাকতে পারেন না বলে উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভায় বক্তারা এমন দাবি করেছেন।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুজন। যে পদ্ধতিতেই নির্বাচন করা হোক, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও জানান বিশিষ্টজনরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারি দলের হয়ে কাজ করছে কিংবা এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা আশাব্যঞ্জক নয়- এমন নানা অভিযোগে যখন বক্তরা সমালোচনামুখর, তখন মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার তাঁর কর্মজীবনের কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তাও আবার তিনি সেটা করেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনারকে দিয়ে।
বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা ও তিনি এক সঙ্গে কাজ করেছেন জানিয়ে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বিবেচনায় নিতে হয় বলেই নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন চাইলেও অনেক কিছু করতে পারে না।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘সিইসি নুরুল হুদা সাহেব নিজেও বলেছেন, আমিও জানি। আমরা একসঙ্গে কাজও করেছি। উনি কুমিল্লায় জেলা প্রশাসক ছিলেন। উনি ১৯৯৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছেন। উনি ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচন করেছেন। দুটি নির্বাচনই একই লোক করেছেন। তাঁর দ্বারা ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও সম্ভব হইছে, পরেরটাও সম্ভব হইছে। পরেরটা যেহেতু সরকার চেয়েছিল, এইভাবে হবে সুতারাং উনি সেইভাবে করতে বাধ্য হয়েছেন। আগেরটা সরকার চেয়েছিল, এভাবে হবে, সুতরাং এভাবেই করতে বাধ্য হয়েছেন।’
‘সরকারি কর্মচারীরা আসলে একটা শেল্ডারের দিকে থাকতে চায়। এই শেল্ডারটা এমন একটা শেল্ডার, যেখানে এদিক-সেদিক করলে তাঁর উপায় থাকবে না, তখন সে ঠিক সোজা পথটায় চলে। পুলিশও তাই করবে, সবাই তাই করবে।’
যেহেতু সরকারের প্রভাবে প্রশাসনের ভূমিকা পুরোপুরি স্বাধীন থাকতে পারে না, তাই অনেক আলোচকেরই প্রস্তাব ছিল নির্বাচনকালীন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না করা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘এখন আমাদের দাবি হওয়া উচিত, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য আমাদের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য। এটা জোরেসোরে দাবি হওয়া উচিত। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। যতই মুখে তারা বলুক না কেন?’
নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তন করলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটাও মানতে রাজি নন আলোচকদের কেউ কেউ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি-বেলার প্রধান ব্যারিস্টার সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো এত বহুবিধ নির্বাচন পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যেমন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন, রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন, একতরফা নির্বাচন, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন, সেনা সমর্থিত নির্বাচন। এত রকমের নির্বাচনের মডেল আমরা সৃষ্টি করে ফেলেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত জনগণ ভোট দিয়ে... একটা ধরনের নির্বাচন, যেটা দিয়ে সবসময় দেশে নির্বাচন হবে, সেটাই আমরা এখনো তৈরি করতে পারিনি।’
তবে সবপক্ষকে শর্তহীনভাবে আলোচনা করেই নির্বাচন নিয়ে বর্তমান অস্থিরতা দূর করতে হবে বলে মত ব্যক্ত করেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সি আর আবরার, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ। বৈঠকে সুজনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার।