ছয় রোহিঙ্গাকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ছয় রোহিঙ্গাকে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছয়জনেরই গলার দিকে কাটা ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্বৃত্তরা তাদের গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেছিল।
আজ সোমবার সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকূল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পেছনের পাহাড় থেকে ওই ছয় রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) দীপঙ্কর কর্মকার আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চাকমারকুলের পারিয়া পাহাড়ের ভেতর থেকে প্রথম দফায় গলাকাটাসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তিন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেন।
উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা হলেন, উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ই-৩ ব্লকের ৮ নম্বর ঘরের আব্দুল গফুরের ছেলে মো. আনোয়ার (৪০), কুতুপাল ই-৩, ৮ ব্লকের সফিক হোসনের ছেলে নুর আলম (৪৫) এবং বালুখালী এ-১, ১ ব্লকের জামাল মোস্তফার ছেলে মো. খালেক (২২)।
উদ্ধারকৃতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একই দিন বিকাল আড়াইটায় অব্যাহত অভিযানে নিখোঁজ আরো তিন রোহিঙ্গাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরা হলেন, বালুখালী ক্যাম্প ১-এর সৈয়দ হোছনের ছেলে জামাল মোস্তফা, বালুখালী-৩৩, ই-৩ ব্লকের মাহমুদুর রহমানের ছেলে সোলাইমান (২০) ও ক্যাম্প-৯, জি-৩৩ ব্লকের জামাল হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৩৩)।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী এসআই দীপঙ্কর কর্মকার বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল স্থানীয়দের সহযোগিতায় সকালের দিকে পাহাড়ের ভেতর থেকে প্রথমে তিনজন এবং পরবর্তীতে তিন জনসহ মোট ছয়জন রোহিঙ্গাকে গলা কাটাসহ রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। তাদের উদ্ধার করে দ্রুত চাকমারকুলের একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য উখিয়া কুতুপালং হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর আহত গলাকাটা অবস্থায় আনোয়ারকে এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
এদিকে খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘চাকমারকূল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পেছনের দুইশ গজ পাহাড়ের ভেতর থেকে গলা কাটাসহ রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে।’
ওসি রনজিত আরো বলেন, ‘উদ্ধারকৃতদের প্রাথমিক তথ্যমতে, তাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানায়। তবে কে বা কারা হত্যার চেষ্টা করছিল, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নূর আহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি উখিয়া থেকে ছয়জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করা হয়েছে। দুই দফায় পুলিশের অভিযানে এদের টেকনাফের চাকমারকুল রোহিঙ্গা শিবির সংলগ্ন পাহাড় থেকে গলাকাটাসহ রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
সম্প্রতি টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে হানাহানি বাড়ছে। গত শুক্রবার টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তরা বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক মো. আবু ইয়াছেরকে (২২) হত্যা করে। এ ঘটনার একদিন আগে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে উখিয়ার একটি ক্যাম্পে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে রোহিঙ্গারা।
এ ছাড়া গতকাল রোববার টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবির থেকে অস্ত্রসহ জিয়া নামের এক রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। রোহিঙ্গা শিবিরে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।