আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় আগামীকাল মঙ্গলবার আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হচ্ছে।
এ পর্যন্ত মামলায় ৪৪ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে। কাল আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে আইনি পয়েন্টে যুক্তি পেশের মধ্য দিয়ে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হবে। বাবরের পক্ষে সাক্ষ্য তথ্য-প্রমাণের (ফ্যাক্টস) ভিত্তিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ২৯ আগস্ট শেষ হয়েছে।
বাবরের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, কাল মঙ্গলবার বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ সমাপ্ত হবে।
রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে।
এ মামলার প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল জানান, ২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিন আসামি হলেন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো ১৮ জন পলাতক।
প্রসিকিউশনের সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার পর পলাতক ১৮ আসামির বিষয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে তাঁদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। এর মধ্যে যাঁদের বিষয়ে আইনে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার মতো ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন। এ আইনজীবীরা পলাতকদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন।
আসামিরা হলেন—মাওলানা তাজউদ্দিন, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মো. হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. খলিল, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন ও মুফতি আবদুল হাই।
আমিনুর রহমান বলেন, পলাতক ১৮ জনের মধ্যে চার আসামির বিষয়ে ‘রাষ্ট্র নিযুক্ত’ আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাঁরা হচ্ছেন আসামি সাবেক সেনা কর্মকর্তা এ টি এম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান। এ চার আসামির আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা তথা মৃত্যুদণ্ডাদেশ হতে পারে এমন কোনো ধারায় অভিযোগ গঠন হয়নি। তাই তাঁরা ‘স্টেট ডিফেন্স বা রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী’ সুবিধা পাচ্ছেন না বলে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষে সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
বিচারের মুখোমুখি থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আবদুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
এ মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। আগামী মঙ্গল ও বুধবার মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, এ মামলার ১১২ দিন যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে টানা ৮৭ কার্যদিবস আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ করছে। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে।
রাষ্ট্রপক্ষে অপর আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল বলেন, ২১ আগস্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আনা পৃথক মামলার বিচার এখন একবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী- সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।