চার জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত
দেশে বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, ফরিদপুর ও মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এনা পরিবহনের দুটি বাসের কারণে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
এনটিভির নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
শিহাব উদ্দিন বিপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বৈশামুড়া এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আজ দুপুর দেড়টার দিকে এনা পরিবহনের একটি বাস খাদে পড়ে এক মা ও তাঁর দুই মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইসাপুর গ্রামের ইসমাঈল মিয়ার স্ত্রী রুবিনা নূর (৪৫) এবং তাঁদের দুই মেয়ে শামীমা নূর (১৫) ও তাসমিরা (৩)। এছাড়াও এ ঘটনায় আরো অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হোসেন সরকার জানান, ঢাকা থেকে সিলেটগামী এনা পরিবহনের একটি বাস সরাইলের বৈশামুড়ায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে এক মা ও তাঁর দুই মেয়ে নিহত হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্বজিৎ সাহা, নরসিংদী : আজ বেলা ১১টার দিকে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার আমতলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এনা পরিবহনের একটি বাসের চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন মেহেদী হাসান (২৫) ও রোমান (২৪)। তাঁরা গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার খিড়াটি গ্রামের বাসিন্দা।
ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। বাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার আমতলা এলাকার আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেলটি বাসের নিচে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলের চালক মারা যান। আহত আরেক মোটরসাইকেল আরোহীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে, ঘটনার পরপর উত্তেজিত জনতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বাস ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। এরপর সৃষ্টিগড় থেকে বাসটিকে আটক করে হাইওয়ে পুলিশ।
সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর : আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গি ইউনিয়নের মশাউজানে বাসচাপায় এক কলেজছাত্রী নিহত হয়। নিহত শারমিন আক্তার (১৯) মনোহরপুর মহিলা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আজ দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী সেবা গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাস একটি মাইক্রোবাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে ওই কলেজছাত্রীকে চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে লোকজন দেড় ঘণ্টা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে মহাসড়কের দুই পাশের চার কিলোমিটার রাস্তায় কয়েকশ পরিবহন আটকা পড়ে। পরে নগরকান্দা উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় সড়কের অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এর আগে গতকাল দুপুরে ফরিদপুরের শিবরামপুর এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে একটি বাস একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে কলেজছাত্র ইমদাদুল হক রক্তিম গুরুতর আহত হন। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে রাতে মানিকগঞ্জ এলাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।
শফিকুল ইসলাম শফিক, মাগুরা : গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার তারাউজিয়াল গ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তির নাম শাহীনুর জোয়াদ্দার সোহান (২৫)। তিনি শ্রীপুরের নলখোলা গ্রামের আজমল জোয়াদ্দারের ছেলে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, সোহান গতকাল সন্ধ্যায় সাচিলাপুর বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে আমতৈল বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। তারাউজিয়াল গ্রামের কবরস্থান এলাকায় পৌঁছালে পাকা সড়কের গতিরোধককে অতিক্রম করার সময় মোটরসাইকেলটি বাধা পেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে তৎক্ষণাৎ মাগুরা সদর হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু মাগুরা নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।