সিরাজগঞ্জে সড়ক থেকে লাপাত্তা চার শতাধিক যান!
সারা দেশে ট্রাফিক সপ্তাহ ও নিরাপদ সড়ক চাইয়ের চলমান অভিযানের মুখে ফিটনেস, রুট পারমিট, ইনস্যুরেন্সসহ কাগজপত্র ঠিক না থাকায় সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন রুটের চার শতাধিক বাস-মিনিবাস ও কোচ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও গ্যারেজে রাখা হয়েছে।
অথচ সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, পাবনা-বগুড়াসহ বিভিন্ন রুটে এক সময় এই অবৈধ যানবাহনগুলো দাপিয়ে বেড়াত। নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনের পর অভিযান শুরু হলে সড়ক থেকে লাপাত্তা হয়ে যায় দূরপাল্লার বাসগুলো।
এদিকে ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে গত ৯ দিনের অভিযানে সিরাজগঞ্জে ৫৭১টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ সময় আটক করা হয়েছে ১২০টি যানবাহন। এসব যানবাহনের অধিকাংশই মোটরসাইকেল।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সিরাজগঞ্জ অফিস থেকে ৫৪০টি বাস, মিনিবাস ও কোচের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া আছে। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই এসব গাড়ির মধ্যে মাত্র ১৭৬টি ফিটনেস ও রুট পারমিট হালনাগাদ করে।
সিরাজগঞ্জ থেকে শহরের ঢাকা রোডের বেশ কয়েকটি কাউন্টারের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, এম এ মতিন বাস টার্মিনাল থেকে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া, সিরাজগঞ্জ-রংপুর, সিরাজগঞ্জ-পাবনা, সিরাজগঞ্জ-কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ-তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুরসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লা রুটে পাঁচ শতাধিক বাস-মিনিবাস ও কোচ চলাচল করে। এর মধ্যে অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন। আবার ফিটনেস থাকলেও নেই বৈধ লাইসেন্সধারী চালক। এতে যেমন রয়েছে প্রাণনাশের হুমকি ও তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনা।
সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেজবাহুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘শুধু গাড়ির ফিটনেস নয়, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির সব কাগজপত্রের জন্যই অভিযান চলছে। আমরা মালিকদের সব কাগজপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করে বাস রাস্তায় বের করতে বলেছি।’
এই শ্রমিক নেতা আরো বলেন, ‘আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত ৫১৬টি বাস রয়েছে। ট্রাফিক অভিযান শুরুর প্রথম দিনে চলেছে মাত্র ১৩টি বাস। পর্যায়ক্রমে বাস চলাচলের সংখ্যা বাড়ছে। আশা করছি, মালিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সব বাসের কাগজপত্র প্রস্তুত করে আবার বাস ছাড়বেন।’
সিরাজগঞ্জ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক আলহাজ আনছার আলী জানান, তাদের ইউনিয়নের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এদের অধিকাংশের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও বৈধ লাইসেন্সে রয়েছে। যাদের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তাঁদের কাগজপত্র ঠিক করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আহসান হাবিব জানান, অভিযান চলাকালে ফিটনেসবিহীন কোনো পরিবহন সড়কে দেখা যায়নি। অভিযান সময় পর্যন্ত ফিটনেসবিহীন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন দূরপাল্লার বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিআরটিএ সিরাজগঞ্জ অফিসের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আলতাব হোসেন জানান, ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের দৌরাত্ম্য থামাতে অভিযান চলছে। জুলাই মাসে আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৯৫টি মামলা ও এক লাখ পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ জানান, গত ৫ আগস্ট ট্রাফিক সপ্তাহ শুরুর দিন থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে মোট ৫৭১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন-ফিটনেস ও অন্যান্য কাগজপত্র না থাকায় ৩৬০টি যানবাহন এবং লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে ২১১টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় ১২০টি যানবাহন আটক রয়েছে। বৈধ কাগজপত্রবিহীন যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।