ইস্ট ওয়েস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ
নিরাপদ সড়কের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলনের পর আজ সকাল থেকে রাজধানীর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও দুপুরে রামপুরা হাতিরঝিল এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
দুপুরে ওই এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট ও আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রামপুরাসংলগ্ন হাতিরঝিলের রাস্তায় নেমে এলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। লাঠিপেটা করে পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে কয়েকজন আহত হন।
রামপুরা, হাতিরঝিলসহ গোটা এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে আটক করা হয় বেশ কয়েকজন ছাত্রকে। পুলিশ বলছে, জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা কাউকে আজ থেকে রাস্তা অবরোধ করতে দিচ্ছে না।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের এক ছাত্রী দুপুর দেড়টার দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে জানান, আজ বেলা ১১টায় তাদের অবস্থান কর্মসূচি করার কথা ছিল। কিন্তু সকাল সোয়া ১০টায় কিছু যুবক তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা দৌড়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে গেট আটকে দেয়। এ সময় যুবকরা ক্যাম্পাসের গেট ভাঙার চেষ্টা করে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
সকালে ইস্ট ওয়েস্ট ও আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রামপুরাসংলগ্ন হাতিরঝিলের রাস্তায় নেমে এলে কিছু যুবকের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। ছবি:সংগৃহীত
আক্রমণকারীরা ক্যাম্পাসের কেউ না উল্লেখ করে ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমাদের বনশ্রী, রামপুরা বাড্ডা সব দিক থেকে আটকায়া রাখছে। কেউ বের হতে পারছে না।’
এ সময় প্রায় ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন ওই শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খন্দকার সেলিম শাহরিয়ার জীবন স্ট্যালিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ সকালে ছাত্র ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থানের ফলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সে সময় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল মারতে থাকে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ছোড়ে। এখনো সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি রয়েছে। পুলিশ নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’
তবে রামপুরা থানায় এনটিভি অনলাইন থেকে ফোন করা হলে সেখানে কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নিয়েছে। কোনো সংঘর্ষ হয়নি, কাউকে আটকও করা হয়নি।’
এদিকে গত দুদিনের সহিংসতার প্রতিবাদে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে ক্যাম্পাসে একটি মিছিল বের হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি। অন্যদিকে ঢাকা কলেজ থেকে সকালে মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। তারা আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা যাচ্ছে।
শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, ধানমণ্ডি ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়ছে।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা রাস্তায় নেমে আসে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করে। কিছু কিছু জায়গায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে রাজধানীসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকরা। এতে করে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি করেছে। তাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার উচিত বলে জানান তিনি।